Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ বছর পর চাঙ্গা টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির বাজার

মহিউদ্দিন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৪ এপ্রিল ২০২২ ১১:৪৬

তাঁতপল্লিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা, ছবি: সারাবাংলা

টাঙ্গাইল: যে কোনো অনুষ্ঠানে বাঙালি নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। আর এতে টাঙ্গাইল শাড়ির জুড়ি নেই। গত দুই বছর করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির পর এবারের ইদে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা বেড়েছে। তবে নানা কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। প্রতি বছরের মতো ইদে শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র ও নতুনত্ব। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা শাড়ি নিতে ভিড় করছেন জেলার তাঁত পল্লিগুলোতে। তবে করোনায় লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত ব্যবসায়ী ও তাঁতীরা।

জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ, ইদুল ফিতর, ইদুল আজহা, দূর্গাপুজা ও বিয়ের উৎসব ইত্যাদি বেচাকেনার প্রধান উপলক্ষ্য ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি। এছাড়া টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, চাঁদর ইত্যাদি সারা বছরই কমবেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। তাঁতশিল্পের পণ্যের অধিকাংশের পাইকারি ক্রেতারাই সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কাপড়ের হাট থেকে কিনে নিয়ে বাজারজাত করে থাকে। জেলার করটিয়া, বাজিতপুর, পাথরাইল, বল্লা, রামপুর, জোকারচর হাট এই শাড়ির জন্য পরিচিত।

জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত কমে গেলেও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া,বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, তারটিয়া, ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলুয়া, দেওজান, নলশোঁধা, বিষ্ণুপুর, মঙ্গলহোড়, কালিহাতী উপজেলার বল্লা-রামপুর গ্রামে তা সচল রয়েছে।

মূলত টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা সারা বছরে দুটি ইদ, দূর্গাপুজা ও পহেলা বৈশাখের জন্য অপেক্ষা করেন। এই উৎসবগুলোই তাদের ব্যবসায়িক লাভের প্রধান উৎস। কিন্তু করোনার কারণে বিগত দুই বছর বন্ধ ছিল অধিকাংশ তাঁত। ব্যবসা হয়নি আশানুরূপ। উল্টো গুণতে হয়েছে লোকসান। তবে এ বছর ইদ ও পহেলা বৈশাখের আগে করোনার প্রকোপ নেই বললেই চলে। স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে মার্কেটগুলোতে। এবারের ইদ ও বৈশাখে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান ব্যবসায়ীরা।

ইদের বাজারে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে সুতি জামদানি, সপ্টসিল্ক, ধানসিঁড়ি, বালুচুরি, গ্যাসসিল্ক, স্বর্ণকাতান, দোতারি, চোষা ও রেশম শাড়ির মতো বাহারি ডিজাইনের শাড়ি বুননে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তাঁত শ্রমিকরা। টাঙ্গাইলের বিখ্যাত তাঁতপল্লি পাথরাইল, চন্ডি, বাজিতপুর, বেলতা ও পুটিয়াজানিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত শাড়ি কিনতে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। শাড়ির দাম আর পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাহিদামত শাড়ি কিনতে পেরে খুশি তারা।

পাথরাইলের তাঁত শ্রমিক যতীন রায় জানান, শফট সিল্ক শাড়ি তৈরি করছেন তিনি। সপ্তাহের মাত্র দুটি শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয়। প্রতিটি শাড়ি তৈরির মজুরি দেওয়া হয় ৯০০ টাকা। এতে কোনো রকমেই চলতে হচ্ছে তাদের।

তিনি আরও বলেন, পাথরাইলের প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বন্ধ হয়েছে শ্রমিক মালিক হওয়ায় আর কিছু করোনায়। শাড়ির দাম বাড়ার কারণে আগে যেখানে মানুষ বছরে ৫টা শাড়ি কিনতেন, সেখানে এখন কিনছেন একটা।

পাথরাইলের শাড়ি বিক্রেতা আলমগীর বলেন, হাতে তৈরি হয় টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। এ কারণে শ্রমিক মজুরি একটা বেশি। এছাড়ার সুতা ও প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় শাড়ির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং’র মালিক রঘুনাথ বসাক জানান, গত দুই বছর জমানো টাকায় সংসার পরিচালনার ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পরেছে ব্যবসা বাণিজ্যে। এছাড়াও করোনা মহামারির প্রভাবে এলাকার প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে সমপরিমাণ শাড়ির উৎপাদন ও শ্রমিক কমেছে।

টাঙ্গাইল শাড়ি ডিজাইনার ও ব্যবসায়ী নীল কমল বসাক সারাবাংলাকে বলেন, করোনার মহামারিতে গত দুই বছর লোকসানের মুখে অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকরাও অন্য পেশায় চলে গেছে। এছাড়াও সুতা ও রঙের দাম বেড়ে গেছে আর কমে গেছে শ্রমিকের মজুরি। সবমিলিয়ে এবার ইদে খুব একটা ভাল নেই প্রান্তিক তাঁতী ও তাঁত শ্রমিকরা। এবারের ইদে প্রকৃতির বিষয়টি মাথায় রেখে রঙের সংমিশ্রণের ফলে শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র। প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে বর্তমানেও এই তাঁত পল্লিতে তৈরি হচ্ছে মনোমুগ্ধকর হাইব্রিড, সুতি ও সিল্ক জামদানি, বালুচুরি, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, শফট সিল্ক, রেশম, তশর, কাতান, একতারি, দোতারি প্রভৃতি টাঙ্গাইল শাড়ী তৈরি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শাড়িগুলোর দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে টাঙ্গাইলের শাড়ি ব্যবসায়ীরা করোনার ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করি।

সারাবাংলা/এনএস

টপ নিউজ টাঙ্গাইল শাড়ি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর