‘প্রজেক্ট করার সময় খেয়াল রাখুন যেন ফায়ার সার্ভিস সুবিধা পায়’
২৪ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৪৮
ঢাকা: কোনো কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করার সময় ফায়ার সার্ভিস যেন পর্যাপ্ত সুবিধা পায় তা খেয়াল রাখতে সরকারি-বেসরকারি আর্কিটেক্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৪ এপ্রিল) সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে যুক্ত ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসকে যুগোপযোগী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন করার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ফায়ার ফাইটাররা যেন আধুনিক প্রশিক্ষিত হয় এবং আন্তর্জাতিকমানের হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ এখানেও একটি দক্ষ জনশক্তি আমাদের দরকার। সেই লক্ষ্য নিয়েই এ পদক্ষেপটা হাতে নিয়েছি। এরইমধ্যে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে এবং কীভাবে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করব, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
বর্তমানে প্রায় ৪৫৬টি ফায়ার স্টেশন আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে ফায়ার স্টেশনগুলো উদ্বোধন করতে যাচ্ছি সেখানে ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আমরা চালু করতে যাচ্ছি। আগামী জুনের মধ্যে বোধহয় আরও ৫৫টি তৈরি হয়ে যাবে।’
বিগত সময়ে বসুন্ধরা মার্কেটে অগ্নিদুর্ঘটনার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। যারা ডিজাইন করেন বা সবকিছু করেন প্রত্যেককে একটি কথা মনে রাখতে হবে। যে কোনো প্রজেক্ট আপনারা তৈরি করার সময় অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা আছে কি না যদি আপনারা তৈরি করেন তাহলে সেই জায়গায় সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিনির্বাপকের আধুনিক ব্যবস্থা আছে কি না সেটি যেমন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আবার যদি কখনও আগুন লাগে, সেটি নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় কি না, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। জলাধার ভরাট করে সবকিছু করা ঠিক না।’
‘যেখানে শুধু জল ছিল যেখানে শুধু বিল ছিল আর সেখানেই একটা বিল্ডিংয়ে অগ্নিনির্বাপকের জন্য পানি পাওয়া যায় না! একটি হোটেলের সুইমিং পুল থেকে পানি আনতে হয়। ঢাকা শহরে যেখানে অজস্র খাল বিল পুকুরের জায়গা, বাংলাদেশটিই তো এই রকম! ভরাট রাখার আগে কিন্তু এ কথাটা মাথা রাখা উচিত ছিল। অনেক সময় আগুন লাগলে কাছাকাছি আগুন পাওয়া যায় না।’
এখন আমাদের মাত্র ২০ তলা পর্যন্ত ফায়ার ফাইটিংয়ের সক্ষমতা আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সেখানে আমি দেখতে পাই কেউ হয়ত শততলা বিল্ডিং করবে, কেউ ৩০ তলা, ৪০ তলা নানারকম প্ল্যান করে বসে আছেন। তার আগে কিন্তু চিন্তা করতে হবে, এখানে কোনো দুর্ঘটনা দেখা দিলে সেখান থেকে উদ্ধার কাজ করার মতো সক্ষমতা আমাদের কতদূর আছে? আমাদের সেই চিন্তাটা করেই কিন্তু পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে মনে করি। কাজেই সেভাবেই আপনারা পদক্ষেপ নেবেন। সেটি আমি চাই।’
অর্থ্যাৎ প্রতিটি বিল্ডিং অফিস আদালত স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শপিংমল বিনোদন কেন্দ্র বিভিন্ন শিল্পকলকারখানা হোক প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থা থাকতে হবে বলে জানান তিনি।
নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই এটি একান্তভাবে দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পানির অভাবে বা এমনভাবে তৈরি করা হলো ফায়ার সার্ভিসের গাড়িই ঢুকতে পারছে না, যদিও ন্যারো জায়গায় যাওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের মোটরসাইকেল তাদের ড্রেসের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিন্তু সেটির তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে।’
বিল্ডিং করার সময় খোলা বারান্দা রাখা একান্ত দরকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত উঁচু ভবনই হোক সেখানে যদি ব্যালকনি বা বারান্দা না থাকে আপনি একটা ল্যাডার দিয়ে যখন একটা লোককে নামাবেন যতগুলো বিল্ডিং যেখানেই হোক প্রত্যেকটা তলায় অবশ্যই সেখানে টানা বারান্দা, ব্যালকনি অবশ্যই থাকতে হবে। আগুন লাগলে তো অক্সিজেনের অভাব হয়ে যায়, মানুষজন ছুটে এসে বাইরে এসে দাঁড়ালে তবু কিছুটা অক্সিজেন নিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক ইঞ্চি জায়গাও কেউ ছাড়তে চায় না। ওইটুকু স্কয়ার ফিট ভাড়া দিলেই তো টাকা! টাকার জন্য এই মোহ অন্ধত্বটাও মানুষের জীবনটাকে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলে।’
তাই এ বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কোনো বিল্ডিং বা যা-ই বানান না কেন অন্তত সেখানে ফায়ার ফাইটাররা সেখানে দাঁড়ায়ে উদ্ধারটা করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা যেন থাকে। এটি আপনারা অবশ্যই দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।’
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে