জমজমাট ইদ বাজার, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ব্যবসায়ীরা
২৪ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৫৪
রাজশাহী: মহাগরীর ব্যস্ত এলাকায় দেশের একটি বিখ্যাত শো রুম। দূর থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ জমজমাট। কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেই শোরুমে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষের ভিড়। ভিতরে পোষাক থেকে বিভিন্ন প্রসাধনীর পসরা। ক্রেতারা দেখছেন-কিনছেন। সবার মধ্যেই উৎসবের আমেজ।
করোনার কারণে গত দুই বছরে ইদে অর্থনীতি স্থবির ছিল। করোনা সংক্রমণের ভীতি দূর হওয়ায় এবার বর্ণিল ইদ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজশাহীবাসী। মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব ঘিরে গতি ফিরে এসেছে অর্থনীতিতে। রাজশাহীর বিভিন্ন মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলোতে মানুষের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে, মানুষের মাঝে আবারও ফিরে এসেছে উৎসব।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারাবছরের বিক্রির অর্ধেকই হয় ইদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে। গত দুইবছরে করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা এবার কেটে। মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের এমন উপচে পড়া ভিড় দেখে খুশিই হচ্ছেন বিক্রেতারা। এবছর ইদে বিভিন্ন মার্কেট, ব্র্যান্ড শোরুম ও সিল্কসহ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্যও আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, থিম ওমর প্লাজাসহ প্রায় সব মার্কেটে মানুষের ঢল নেমেছে। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের ভিড় আর ফুটপাতের বিক্রেতাদের হাঁকডাক এবং রাস্তায় মানুষ আর নানা যানবাহনে একাকার।
ক্রেতা টানতে নানা রকম আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে ব্র্যান্ড শো রুমগুলো। তবে অভিযোগ আছে, ব্র্যান্ড শো রুমগুলো মূল্য নিয়ে কারসাজি করছেন। দাম বাড়িয়ে তারা ক্রেতা আকৃষ্ট করতে এরকম প্রতারণা করছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
অন্যদিকে, নিম্ন আয়ের মানুষেরা কেনাকাটা করছেন ফুটপাত থেকে। ছেলেদের এবার বেশি চাহিদা পাঞ্জাবিতে। তবে শার্ট, প্যান্ট, টিশার্টও কিনছেন। আর তরুণী ও নারীরা কিনছেন শাড়ি, থ্রিপিস ও ফ্রক। তবে এবারও বিভিন্ন নামে মেয়েদের ড্রেস বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জুতার দোকানেও বিক্রি বেড়েছে অনেক। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই নগরীর মার্কেটগুলোতে।
সকাল থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলে মার্কেট, শপিংমল, ফ্যাশন হাউজ ও বিপণিবিতালগুলোতে। এমনকি ফুটপাতগুলোতেও বেঁচাবিক্রি জমে ওঠেছে। দর্জিপাড়ায় দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। প্রায় ৭০-৮০ ভাগ দর্জির দোকান ইদের বাড়তি কাজের চাপে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ২০ রমজান থেকে ডেলিভারিও দিতে শুরু করে দিয়েছে।
ইদ শপিং করতে একটি ব্যান্ড শোরুমে এসেছেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ফারিহা রহমান আন্নি। তিনি বলেন, ‘করোনা কারণে দুটি ইদ মাটি হয়ে গেছে। এ কারণে এবার পরিবারের সবার জন্য শপিং করছি। এবার স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারার আনন্দ অন্যরকম এক অনুভূতি।’
ফারজানা জেসমিন নামের আরেক তরুণী বলেন, ‘মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখছি। কিন্তু এবার আকর্ষণীয় কাপড় খুব কমই আছে। পোশাক-আশাকের দাম আগের অন্যবারের তুলনায় এবার বেশিই মনে হচ্ছে।’
তবে দাম বেশি ও বাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দুই বছর ব্যবসা প্রায় বন্ধ থাকায় এবার বিক্রি বাড়াতে কিছু ‘কৌশল’ নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পোশাকের দাম নতুন করে না বাড়িয়ে ছাড় দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণ করা। এতে করে বিক্রি বেশি হওয়ায় বেশি মুনাফা করতে পারা যাবে।
রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘করোনা না থাকায় আরডিএ মার্কেটে এবার ব্যবসা হচ্ছে। এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দে ব্যবসা করছেন। এ অবস্থা থাকলে ব্যবসায়ীরা দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।’
রাজশাহী বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অশোক কুমার বলেন, ‘করোনার মরণছোবল থেকে ব্যবসায়ীরা প্রায় মৃত হয়ে গিয়েছিল। দাঁতে দাঁত চেপে বসে বসে কষ্টে সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে। কিন্তু করোনা না থাকায় এবার অবস্থা অনেকটাই ভিন্ন এবং অনেকটাই নিরাপদ। এবার সুযোগ এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে আশা করা যাচ্ছে এইবার রাজশাহীর মার্কেটগুলো থেকেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।’
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের মুন্না বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চল মূলত সিল্কের জন্য বিখ্যাত। গত দুই বছরে অন্যরা ব্যবসা করতে পারলেও সিল্কের কোনো ব্যবসা হয়নি। সিল্ক ব্যবসায়ীদের হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। এইবার রোজার আগে থেকেই ব্যবসা শুরু হয়েছে। আর এখন তো প্রায় ইদের কাছাকাছি। প্রতিটা শোরুম ভালো ব্যবসা করছে এই ইদে। এইবার সিল্ক থেকেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।’
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকান্দার আলী বলেন, ‘এবার দেশে করোনার না থাকায় মানুষ নির্ভয়ে ইদের কেনাকাটা করছে। তবে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলে আমরা আগামীতে আরও ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবো। বর্তমানে ইদকে সামনে রেখে বাজারের যে ভাবে কেনাকাটা বেড়েছে তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা অনেকটাই পাল্টে গেছে। এতে গত দুই বছর পর রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে।’
সারাবাংলা/এমও