Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতে বাড়ছে করোনা, বাড়তে পারে বাংলাদেশেও: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৫৩

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও আবার বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

রোববার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত নিপসম অডিটোরিয়ামে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ আশঙ্কার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

জাহিদ মালেক বলেন, ‘বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নেই বললেই চলে। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে সংক্রমণ ফের বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ভারতে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে অনেকেই যাতায়াত করছেন। দেশে ফেরার পর তাদের নজরে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ এখন ভ্যাকসিনের আওতায়। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও এত ভ্যাকসিন দিতে পারেনি। এখনও যারা ভ্যাকসিন নেয়নি, তারা ইচ্ছাকৃত নিচ্ছেন না।’

জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জানানো হয় এবার সপ্তাহটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সঠিক পুষ্টিতে সুস্থ জীবন’। শনিবার (২৩ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘গত ১০ বছরের স্বাস্থ্য বিভাগের অভূত উন্নতি হয়েছে। দেশ এগিয়ে যেতে হলে মানুষকে সুস্থ থাকতে হবে। এ জন্য পুষ্টি অপরিহার্য। আমাদের দেশে পুষ্টি সেবার অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার। সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টি নিয়ে সচেতন করা হয়। অতিরিক্ত তেল ও লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা কী খাচ্ছি সেটা দেখতে হবে। সংক্রামণ ব্যাধি যক্ষ্মা, পোলিও, ম্যালেরিয়া, এইডস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে, অসংক্রামক রোগ যেগুলো মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলো বাড়ছে। আমাদের পরিমিত খেতে হবে। পুরো দেশে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়ে, তখন ভিটামিন সি, ডি ও জিংক খেতে বলি। এতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।’ ক্যালরিতে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে বলে উল্লেখ করেন জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ‘এখনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, কিন্তু কেউ না খেয়ে থাকে না। খাদ্যের অভাব যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশে খর্বাকৃতির মানুষের হার যেখানে আগে ৫০ শতাংশ ছিল, এখন তা নেমে এসেছে ৩০-এ।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্কুল ফিডিং জোরদারের চেষ্টা করছে সরকার। ছেলেমেয়েদের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ফার্স্টফুড খাবার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় পুষ্টি সেবা প্রকল্প কার্যক্রমের পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতি তিন জনে একজন অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে। যেখানে সামনে আসছে পুষ্টির বিষয়টি। একজন মানুষকে কোন বয়সে কী ধরনের খাবার খেতে হবে সেটি চিন্তা করতে হবে। আমরা খাদ্যের পুষ্টির চেয়ে তৃপ্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, তাতে যথেষ্ট। তবে পুষ্টিতে জোর দিতে হবে।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় চিকিৎসাকে যদি গুরুত্ব দিতে না পারি, তাহলে এগোতে পারবো না। প্রয়োজনে এটার জন্য আলাদা বিভাগ চালু করতে হবে। প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের ওপরই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নির্ভর করছে।’

তিনি বলেন, ‘শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেগুলোকে আরও উন্নতমানে নিতে হবে, পুষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। টার্শিয়ারি পর্যায়ে এখন রোগীদের মাটিতে থাকতে হয়, যা খুবই দুঃখজনক। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে রেফারেল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য সবার মধ্যে পুষ্টি সচেতনতা তৈরি করা। মাঠ পর্যায়ে এটির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা। স্বাধীনতার শুরুতে পুষ্টিজনিত যেসব রোগ ছিল, তা থেকে অনেকটা বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু নগরায়নের ফলে পুষ্টি চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘পুষ্টিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিককে কাজে লাগাতে হবে। বলা হয়ে থাকে, ২২টি মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু বাস্তবে যদি আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্ক না বাড়ে তাহলে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং জাতীয় পুষ্টি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডা. জুবাইদা নাসরীনসহ অন্যান্যরা।

এর আগে, ২৩ এপ্রিল থেকে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে আলোকসজ্জা, ব্যানার-ফেস্টুন ও গণমাধ্যমে প্রচার শুরু করা হয়। সপ্তাহব্যাপী চলা এই কর্মসূচির আওতায় ২৫ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিলনায়তনে ‘আরবান নিউট্রিশন’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ এপ্রিল ‘নিউট্রিশন : অপরচুনিটি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে। ২৭ এপ্রিল লেকশোর হোটেলে ‘নিউট্রিশন গভরনেন্স’ শীর্ষক সেমিনার হবে।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

জাহিদ মালেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর