নদী দখল-দূষণের জন্য দায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও কারখানা
২৫ এপ্রিল ২০২২ ০০:১২
ঢাকা: দেশের নদ-নদী দখল ও দূষণের পেছনে স্বয়ং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানা দায়ী। তাই সরকার এর দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ। তিনি বলেন, আইন যারা করছে তারাই আইনের তোয়াক্কা করছে না। নদী রক্ষা কমিশন যেন তাদের কাজ ঠিক ভাবে করে সেজন্য প্রয়োজনে আমরা চাপ প্রয়োগ করব। নদী রক্ষায় নদী কমিশনকে আরও স্বাধীন ও নির্ভীক হতে হবে।
রোববার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী’ শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
১৯৭০ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালন হয়ে আসছে। বর্তমানে প্রায় ১৫০টি দেশে এ দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন ও জাতীয় নদী জোটের যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজনে অতিথিরা দেশে নদ-নদী রক্ষায় আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নাই বলে অভিযোগ করেন।
বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে এবং বাপা’র নদী ও জলাশয়বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. হালিম দাদ খানের সঞ্চালনায় ওই সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
মূল বক্ত্যব্যে ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের দেশের পরিবেশ মাটি পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর। এদেশে যা রোপন করা হয় তাই হয়, যা অন্যান্য দেশে এত কমখরচে কখনও সম্ভব না। এর কারণ আমাদের দেশ নদ-নদী বিধৌত। কিন্তু দখল ও দূষণের কারণে অনেক নদীই আজ মৃতপ্রায়। নদ-নদী দখল করলে শাস্তির বিধান থাকার পরেও প্রয়োগ না থাকায় দখলদাররা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যথাযথ শাস্তি দেওয়া না গেলে এদের থামানো যাবে না।’
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে, পরিবেশ নদী ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ, আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারলে নদী উদ্ধার সম্ভব।
অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, ‘ধরিত্রীকে যারা নষ্ট করছে তারা ধীরে ধীরে মানব সভ্যতাকে নষ্ট করছে। মানুষের কারণে ধরিত্রী ও মানুষ ধ্বংস হতে চলেছে। মানুষ তার আচরণ পরিবর্তন না করলে একদিন মানব সভ্যতাও ধংস হয়ে যাবে। নদী একটি দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি বহন করে। সেই সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে মুছে ফেলা হচ্ছে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের নামে।’
বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘স্থান ও এলাকাভেদে নদীর ধরণ ভিন্ন হয়। দেশের চলমান নদী উদ্ধার তৎপরতায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ়তা জাতির মনে আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু নদীর সীমানা যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর কারণে এটি একটি ক্রুটিপুর্ণ উদ্যোগ। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় বড় দখলদারদের চিরস্থায়ী বৈধতা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দখল এবং দূষণ অব্যহত রেখে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না করে চলমান এ উদ্ধার তৎপরতা দীর্ঘমেয়াদে নদী ও দেশের জন্য মারাত্মক অকল্যাণকর। যথাযথ ইআইএ না করেই দেশে তথাকথিত উন্নয় প্রকল্প গ্রহণের প্রবণতা দূর করতে হবে।’
ড. হালিম দাদ খান বলেন, ‘নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে সাধারণ জনগণকে অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও নদী রক্ষায় কাজ করতে হবে। ফৌজদারী আইনও সংশোধন করতে হবে। যেন দখলদাররা নদীকর্মীদের বিরুদ্ধে কোন ভয়ভীতি দেখানোর সাহস না পায়। আমাদের অভ্যন্তরীণ নদীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নদী রক্ষায়ও কাজ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন জাতীয় নদী জোটের সদস্য সাঈদা রোখসানা খান, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়নমেন্ট’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ, বাপা’র নির্বাহী সদস্য এমএস সিদ্দিকী, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ন কবির সুমন, বারোগ্রাম সংগঠনের নেতা সাইফুল ইসলাম, বসিলা বুড়িগঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মানিক হোসেন, ঘাট শ্রমিক সমিতির সভাপতি, আমজাদ আলী প্রমুখ।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম