Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখনো ইদ বোনাস হয়নি ৬৬ শতাংশ কারখানায়

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ এপ্রিল ২০২২ ১০:২১

ঢাকা: ইদের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। কিন্তু সোমবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশের মাত্র ৩৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কারখানায় ইদের বোনাস হয়েছে। বোনাস হয়নি ৬৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ কারখানার শ্রমিকদের। অন্যদিকে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে এসেও মার্চ মাসের বেতন পাননি ৩৭টি পোশাক কারখানাসহ ১০২টি শিল্প কারখাানার শ্রমিকরা।

শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, পোশাকসহ ৬০২৫ টি কারখানায় সোমবার পর্যন্ত ইদের বোনাস হয়নি। এপ্রিল মাসের অর্ধেক বেতন হয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ কারখানায়। এরইমধ্যে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে মিরপুর ও উত্তরায় বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।

পোশাক মালিকরা বলছেন, ইদের আগেই শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়ে যাবে। শ্রমিক নেতারাও একই ধরনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। যেকোনো ধরনের শ্রম অসন্তোষ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে শিল্প পুলিশও। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম সারাবাংলাকে বলেন, বিজিএমইএ’র যে দুয়েকটি কারখানায় মার্চ মাসের বেতন হয়নি, তাদের বেতন হয়ে যাবে। যারা বেতন দিতে সমস্যা করছে, তারা মূলত সাব কন্ট্রাকে কাজ করে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলোতে বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। এপ্রিল মাসের ব্তেনও দেওয়া হচ্ছে। ইদের আগেই প্রতিটি কারখানায় বেতন-বোনাস হয়ে যাবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আগামী শুক্র ও শনিবারও ব্যাংক খোলা। আশা করি পহেলা মের আগেই সব কারখানায় বেতন বোনাস হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন ব্যবসা সবচেয়ে ভালো। প্রতিটি কারখানাতে প্রচুর অর্ডার রয়েছে। সবার হাতেই কাজ আছে। তাই বেতন বোনাস দিতে দুয়েকটি কারখানা ছাড়া কারো সমস্যা হবে না।’

শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, পোশাকসহ ১০২টি শিল্প কারখানার শ্রমিকরা এখনও মার্চ মাসের বেতন পায়নি। বেতন হয়নি বিজিএমইএ’র ১৩টি, বিকেএমইএ’র ১৬টি, বিটিএমএ’র ৮টি, বেপজার ২টি ও অন্যান্য ৬৩টি কারখানায় বেতন হয়নি। দেশের মোট ৯ হাজার ১৭৬টি কারখানার মধ্যে সোমবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন পেয়েছে ৯ হাজার ৭৪টি কারখানার শ্রমিকরা। বেতন হয়নি ১০২টি কারখানার শ্রমিকদের।

পোশাকসহ দেশের মোট ৯ হাজার ১৭৬ টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়েছে ৩ হাজার ১৫১টি কারখানায়। বোনাস হয়নি ৬ হাজার ২৫টি কারখানায়। বিজিএমইএ’র ১৬১৫টি কারখানার মধ্যে ৭৮৮টি কারখানায় বোনাস হয়েছে। বোনাস হয়নি বিজিএমইএ’র ৮২৭টি কারখানায়। বিকেএমইএ’র ৬৮৫টি কারখানার মধ্যে বোনাস পেয়েছেন ১৮৭টি কারখানার শ্রমিকরা। এখনো বোনাস হয়নি ৪৯৮টি কারখানায়। বিটিএমএ’র ৩৩৮টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়েছে ১২৯টি কারখানায়, বোনাস হয়নি ২০৯টি কারখানায়। বেপজার ৩৪৮টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়েছে ২৩১টিতে, ৮৩ টি পাটকলের মধ্যে বোনাস হয়েছে ১৯টির ও অন্যান্য ৬ হাজার ১০৭টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৯৭টি কারখানায়।

প্রসঙ্গত, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইদের আগেই বোনাস ও এপ্রিল মাসের অর্ধেক বেতন দিতে হবে শ্রমিকদের। কিন্তু মার্চ মাসের বেতনও বাকি রয়েছে অনেক কারখানায়। বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে বিক্ষোভ হয়েছে। সোমবার মিরপুর-১১ নম্বর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কটোন টেক্সটাইল এন্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা।

তাদের অভিযোগ, তিন মাস ধরে বেতন বকেয়া রেখেছে গার্মেন্টস মালিক। গত ২০ এপ্রিল বকেয়া বেতন ও বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্টসের পানি ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে মালিক পালিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সকালে উত্তরায় উত্তরা ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেডের ৬০০ কর্মী ও ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেডের ৫৫০ কর্মীসহ প্রায় ১২০০ গার্মেন্টস কর্মী র‌্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে রাজধানীতে তীব্র যানজট তৈরি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম সারাবাংলাকে বলেন, যে দুটি কারখানায় বিক্ষোভ হয়েছে, সেখানকার সমস্যা দূর হয়ে গেছে। কারখানা দুটির বেতন বোনাস মঙ্গলবারের মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, বেশিরভাগ কারখানায় এখনো বেতন-বোনাস দেওয়া হয়নি। আমরা দাবি করেছিলাম ২০ রোজার মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে। কিন্তু সরকার আনলিমিটেড টাইম দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ ইদের আগে বেতন-বোনাস দিলেই হলো।

তিনি বলেন, স্বরাষ্টমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে- মার্চ মাসের বেতনই বাকি রয়েছে প্রায় ৪০০ কারখানায়। সরকার বলেছে এপ্রিল মাসের অর্ধেক বেতন দেবে। আমরা এপ্রিল মাসের পূর্ণ বেতন ও এক মাসের সমান বোনাস দেওয়ার দাবি করেছিলাম। আমরা এখনো এই দাবি করছি। কারণ বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার মান যেভাবে বেড়েছে, পরিবহন খরচ যেভাবে বেড়েছে, অর্ধেক মাসের বেতন, বেতনের অর্ধেক বোনাস দিয়ে শ্রমিকদের ইদ করা হয়ে উঠবে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে, বড় কারখানাগুলোতে এরইমধ্যে বেতন বোনাস হয়ে গেছে। ছোট কিছু কারখানায় হয়তো বেতন-বোনাস হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আমরা কথা বলছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ঈদের আগেই বেতন বোনাস হয়ে যাবে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এএম

৬৬ শতাংশ কারখানা ইদ বোনাস বেতন মার্চ মাসের বেতন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর