‘আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়া’
২৬ এপ্রিল ২০২২ ১৪:২২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যাই না, তার আদর্শের সৈনিকও। তাই আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়া, তাদের জন্য কাজ করা। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে তৃতীয় পর্যায়ে ৩২ হাজার ৯০৪টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সরকারের চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি ভূমিহীন ও গৃহহীনরা ইদের আগে এই উপহার পেল। গৃহহীন-ভূমিহীন উপকারভোগী মানুষরা ইদের আগে জমিসহ ঘর উপহার পেয়ে খুশির আনন্দে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধবিধস্ত সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একদিকে বিধস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, অপরদিকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। এই অতি স্বল্প সময়েরে মধ্যে দেশকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন।’
ভূমিহীনদের পুনর্বাসনটা ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে সেটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহায়তায় যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের দুভার্গ্য হলো সেই অর্জন আর ধরে রাখা হয়নি। যারা পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসেন তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়টাকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল, আদর্শকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আবার যেন এই পাকিস্তানিদের পদলেহন করে সেটাই বোধ হয় তাদের লক্ষ্য ছিল।’
২১ বছর পর আওয়াসী লীগ সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে সম্মান পেয়েছে সেই সম্মান নিয়ে বিজয়ী জাতি হিসাবে দেশকে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে এগিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সেইসঙ্গে কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব এবং নিজের দেশকে উন্নত করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এদেশে তো কিছুই নাই, আপনি কি দিয়ে দেশকে গড়ে তুলবেন। তিনি একটি কথাই বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। আমি এই মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমার মনে হয়, বিশ্বের কোনো নেতা এত বড় কথা কখনো বলতে পারেন নাই, এত সাহসিকতা দেখাতে পারেন নাই। আজকে যদি জাতির পিতার আমরা না হারাতাম তাহলে বাংলাদেশ ৪০ বছর আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে মর্যাদা পেত, সেই বিশ্বাস আমার আছে।’ কিন্তু সেটা আমাদের ভাগ্যে হয়নি বলেও আক্ষেপ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
২১ বছর পর সরকারের প্রথম মেয়াদে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প চালুর মাধ্যমে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে আমরা সরকারে আসিনি। আটটা বছর সময় নষ্ট হয়। ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার আমরা আমাদের এই পদক্ষেপ হাতে নিই। যাতে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি সব সময় এটাই বলতেন, আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। আমিও জাতির পিতার সেই আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলছি। সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের যেসব ছিন্নমূল মানুষ আছে, যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, যারা কখনো স্বপ্নই দেখতে পারে না, যারা একবেলা এক মুঠো খাবার জোটাতে পারে না, সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করাই সরকারের বড় লক্ষ্য।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবেহলিত মানুষগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের পুনর্বাসনের কাজ আমরা করে যাচ্ছি এবং আমি মনে করি আমাদের অর্থ্যাৎ আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীর দায়িত্ব জাতির পিতার এই আদর্শটা মাথায় রেখে কাজ করে যাওয়া। আমরা সারাদেশে একটা সার্ভে করে দেখেছি সেখানে প্রায় ৮ লাখের উপর মানুষ পেয়েছি যারা ছিন্নমূল। এই মানুষগুলোকে আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না! পৃথিবীর কোনো দেশে কেউ এরকম উদ্যোগ নিয়েছে কি না? কিন্তু আমরা জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক। আমি তো শুধু তার কন্যাই না, তার আদর্শ আমি বিশ্বাস করি। আমার কাছে ক্ষমতটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়া, জনগণের জন্য কাজ করা। আর আমি আজ সেটাই করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।’
তৃতীয় ধাপে এসব ঘর প্রদানের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পরিবার। তৃতীয় ধাপের আরও ৩২ হাজার ৭৭০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। আশ্রায়ণের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো অনেক বেশি টেকসই। তৃতীয় ধাপে একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। তৃতীয় ধাপের ঘরগুলোতে আরসিসি পিলার, গ্রেড ভিম, টানা লিংকটারসহ বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়।
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, নদী ভাঙণ কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২২ সালে মার্চ অবধি ৭ হাজার ২৪৪ ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া ভাসমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীও রয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম