কর্মক্ষেত্রে হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড প্রণয়নের আহ্বান
২৬ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৫৯
ঢাকা: শ্রম আইন সংশোধন করে আইএলও কনভেনশনের ১০২ ও ১২১ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে মানদণ্ড প্রণয়নেন আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের (এসএনএফ) উদ্যোগে ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৯ বছর: শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তি নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা আর যেন না ঘটে, তার জন্য কর্মস্থল নিরাপদ করতে হবে উল্লেখ করে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূইয়া বলেন, কর্মস্থল নিরাপদ হলে শ্রমিকরা যেমন নিরাপদ, তেমনি মালিকরাও নিরাপদ। তাই কর্মস্থলের নিরাপত্তা মালিকদেরই নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরও সচেতন হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে হবে। এসময় তিনি রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় কতজন শ্রমিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত, তাদের একটা ডাটাবেজ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী ও শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে একটি মানদণ্ড থাকা প্রয়োজন, যেন হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়। সেফটি কমিটির সদস্যদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষতিপূরণের সমাধান টাকার অঙ্কে হতে পারে না। এর জন্য আইএলও কনভেশন ১০২ ও ১২১-কে মানদণ্ড ধরে শ্রমিকের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে হবে। শ্রম আইনে শ্রমিকদের ন্যূনতম যেটুকু অধিকার রয়েছে, তারা তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বর্তমান বাস্তবতায় দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সামঞ্জস্য নয় উল্লেখ করে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আইএলও’র মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের সংশোধনীতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এসময় তিনি এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম চালু করার আহ্বান জানান।
শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) নেতা কামরূল আহসান বলেন, কলকারখানাগুলো যারা গড়েন তাদের বিধি-বিধানগুলো না মানার কারণেই কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা হতাহত হচ্ছে।
শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরান শ্রমিকরা। কিন্তু মর্যাদার জায়গায় তারা বঞ্চিত। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ওভারটাইম— সবই মজুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে আয়ের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড ঠিক করে সে অনুযায়ী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, শ্রম আদালতে একটি মামলা শেষ হতে অনেক সময় অতিবাহিত হয়। অনেক সময় ৮/১০ বছরেও শেষ হয় না। স্বল্প সময়ে যেন শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পত্তি করা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের হয়রানি কমবে না। তারা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কার্যক্রম আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। বক্তারা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দিয়ে এবং সেফটি বিধিমালা অনুযায়ী কারখানার ভবন নির্মাণ করা, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
ব্লাস্টের উপপরিচালক (আইন) অ্যাডভোকেট মো. বরকত আলীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত শ্রম উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, কর্মজীবী নারীর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবী, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফউদ্দিন, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মমতাজ বেগম, বিলস্ পরিচালক নাজমা ইয়াসমীনসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/টিআর
আইএলও কনভেনশন ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড রানা প্লাজা রানা প্লাজা ধস শ্রমিক নিরাপত্তা