রেলের বগিতে জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু ঘুরবেন প্রত্যন্ত অঞ্চল
২৭ এপ্রিল ২০২২ ১০:০৪
ঢাকা: রেলে চেপে প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়াবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুনতে কল্প কাহিনীর মতো হলেও সেই কল্পনাকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেল কোচের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর। ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ নামের এই জাদুঘরটি ঘুরে বেড়াবে জেলা থেকে জেলায়। আর সেই জাদুঘর থেকে মানুষ জানবে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামমুখর জীবনের কথা, শুনবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, দেখবে বঙ্গবন্ধুর জীবনের উল্লেখযোগ্য সব ঘটনা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থেকে জানতে পারবে মানুষের জন্য উৎসর্গ করা বঙ্গব্ন্ধুর মহাজীবনের সব ঘটনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রেলের বগিতে এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার (২৭ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যতিক্রমী জাদুঘরের উদ্বোধন করবেন।
একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ কোচে গড়ে তোলা হয়েছে একই ধরনের দুইটি জাদুঘর। বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যবহুল ও মনোমুগ্ধকর ১২টি পৃথক তথ্যচিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘর। এতে ঢুকেই দর্শক পরিচিত হবেন জাতির পিতার শৈশবের দিনগুলোর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে গণমানুষের নেতা হয়ে ওঠার গল্প পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরে।
https://youtu.be/4h7gB7rlmuM
কোচের এক পাশের দেয়ালে ছয়টি ডিসপ্লেতে স্থান পেয়েছে ছয়টি তথ্যচিত্র। শিরোনাম রাখা হয়েছে— কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র এবং মুক্তির স্বপ্নের সূচনা। বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত তুলে ধরা এই তথ্যচিত্রগুলোতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অবদান, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাসের বিভিন্ন সময়।
বগির আরেক দেয়ালে রয়েছে আরও ছয়টি তথ্যচিত্র। শিরোনাম— দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কাণ্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি-সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো এবং যে আলো নেভেনি আজও। এই তথ্যচিত্রগুলোতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছেষট্টির ঐতিহাসিক ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, গৌরবজ্জ্বল একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে।
কোচের এক প্রান্তে রাখা একটি বড় এলইডি মনিটরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেখার সঙ্গে সঙ্গে যেন দর্শকরা ভালোভাবে শুনতে পান, তার জন্য হেডফোনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন রেলকে জনগণের বাহন উল্লেখ করে সারাবাংলাকে বলেন, যাতায়াতের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য সাধারন মানুষ রেলকেই বেশি পছন্দ করে। দেশের ৮০ শতাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ রয়েছে। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মাথায় রেখেই তাই রেলকে বেছে নিয়েছি বঙ্গবন্ধুর জীবনকে মানুষের সামনে তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে। রেলের মিটারগেজ ও ব্রডগেজ বগিতে নির্মাণ করা জাদুঘরটি সম্পূর্ণভাবে জাতির পিতাকে নিয়েই করা হয়েছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার সারাজীবনের যেসব উল্লেখযোগ্য ঘটনা, সেগুলো মিলিয়েই এই জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, নতুন প্রজন্ম যেন সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারে, বঙ্গবন্ধুর জীবনকে জেনে তার দেশকে ভালোবাসার আদর্শ ধারণ করে সত্যিকারের নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
মন্ত্রী আরো বলেন, জাদুঘরটি আরও আগে উদ্বোধনের কথা ছিল। আমরা চেয়েছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এটি উদ্বোধন করবেন। তিনি সময় দিয়েছেন। জানিয়েছেন, গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই জাদুঘর তিনি উদ্বোধন করবেন। এরপরই সাধারণ মানুষের জন্য জাদুঘর খুলে দেওয়া হবে।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে আরও রাখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের আদলে তৈরি একটি বুক শেলফ, যেখানে স্থান পেয়েছে প্রায় একশ বই। বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা বই ছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইও রয়েছে সেখানে। শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর লেখা বইও আছে। ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসু তথা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ছয়টি চিঠির প্রতিলিপি রয়েছে জাদুঘরে, যা বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে দর্শনার্থীদের। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোশাক ও বিভিন্ন দ্রব্যের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল ও স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতিও।
দর্শকদের নজর কাড়তে এই জাদুঘর তথা রেলের বগির ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগান। কোচের ভেতরেই কেবল নয়, বাইরের অংশটিও চোখ জুড়াবে। এখানে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সংগ্রামের ধারাবাহিকতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শিল্পীর তুলিতে।
এই উদ্যোগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, আমাদের গ্রহণ করা বেশিরভাগ কার্যক্রমই অস্থায়ী। স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো কার্যক্রম হাতে নেওয়া যায় কি না, সেই ভাবনা থেকেই বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি কোচের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনীকে ধারণ করে জাদুঘর তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ স্টেশনই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। ফলে এই জাদুঘরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী সারাদেশে একদম প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে জাতির পিতাকে নিয়ে শহরকেন্দ্রিক যে আয়োজন, তার বাইরে গিয়ে গ্রামেও সে আয়োজনকে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। এই সুযোগটিই আমরা নিতে চেয়েছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্টেশনে এই জাদুঘর আমরা শিডিউল করে নিয়ে যাব। সেখানকার মানুষদের আমরা আমন্ত্রন জানাব। আর সারাদেশে যেন এই জাদুঘর পৌঁছে দেওয়া যায়, সে কারণেই মিটারগেজের পাশাপাশি ব্রডগেজ কোচেও নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু জাদুঘর বাংলাদেশ রেলওয়ে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর রেলের বগিতে জাদুঘর শেখ মুজিব শেখ মুজিবুর রহমান