নওগাঁয় ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনে চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট বাস
২৭ এপ্রিল ২০২২ ১০:৩২
নওগাঁ: ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা। পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটকদের পক্ষে একদিনে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান দর্শন করা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প খরচে একদিনে একাধিক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ভ্রমণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রথম ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। এতে করে আনন্দিত নওগাঁবাসী। ইতোমধ্যেই টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। এই ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসে এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থা বদলে যাবে বলে আশা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি বাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৪৫০টাকার একটি প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একজন পর্যটক খুব সহজেই প্রথমে ভারত সীমান্তঘেঁষা উপজেলা ধামইরহাট উপজেলার জাতীয় উদ্যান শালবন বিহারের আলতাদীঘি, ঐতিহাসিক জগদ্দল বিহার, বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও হলুদ বিহার ভ্রমণ করতে পারবেন।
ধামইরহাটের আলাতাদীঘির বিট কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। কথায় আছে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে হলে আগে নিজের এলাকার ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করা উচিত। তাই পর্যটকরা আলতাদীঘিতে এলে জাতীয় উদ্যানসহ ভারতের সীমান্তও দেখতে করতে পারবেন। এতে করে এই অঞ্চলের সবকিছুতেই উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করবে। এই সার্ভিসের মাধ্যমে পর্যটকে মুখরিত হবে নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানসমুহ পাশাপাশি সরকার অর্জন করতে পারবে অতিরিক্ত রাজস্ব।
ধামইরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম বদিউল আলম বলেন, হাজার বছরের ঐতিহাসিক আরেকটি নিদর্শন হলো জগদ্দল বিহার। যেখানে মিশে আছে হাজার বছর আগের ইতিহাস। তাই একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য নওগাঁর এই সব ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া এই উদ্যোগের মাধ্যমে নওগাঁর পর্যটন এলাকাগুলো নতুন করে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হওয়ার সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা কেন্দ্রিক মানুষগুলো আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। গড়ে উঠবে নতুন নতুন উদ্যোক্তার।
নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল মোস্তফা কালিমী বাবু বলেন, অনেক নিম্ন আয়ের মানুষদের ইচ্ছে থাকলেও নিজের এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করতে পারেন না। আবার শিক্ষার্থীদের জন্যও এই উদ্যোগ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। তারা ইচ্ছে করলেই একদিনে স্বল্প খরচে এই ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারবে। এমন চিন্তা থেকেই নওগাঁর পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকদের ভ্রমণকে সহজলভ্য করতেই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগ হয়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমি আশাবাদি শুধু নওগাঁবাসীই নয় দেশের অন্যান্য স্থানসহ দেশের বাহিরের পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে দেশসহ বিশ্বের পর্যটকদের কাছে নতুন করে তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম আসন্ন ইদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। উদ্বোধনের পর প্রতিদিন ট্যুরিস্ট বাস শহরের মুক্তির মোড় থেকে সকাল ৯টায় যাত্রা শুরু করবে। মুক্তির মোড়ের পদ্মা বাস কাউন্টার থেকে এই প্যাকেজের টিকেট পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একটি বাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৪৫০টাকার একটি প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই প্যাকেজের মাধ্যমে একজন পর্যটক খুব সহজেই প্রথমে ভারত সীমান্তঘেঁষা উপজেলা ধামইরহাট উপজেলার জাতীয় উদ্যান শালবন বিহারের আলতাদীঘি, ঐতিহাসিক জগদ্দল বিহার, বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও হলুদ বিহার ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া প্যাকেজের মাধ্যমে ভ্রমণরত পর্যটকরা সকাল ও বিকেলের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার পাবেন।
মেহেদী হাসান আরও জানান, বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে প্রতিবার ভ্রমণের দিন বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এরপর হলুদ বিহার দর্শন শেষে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে এসে শেষ হবে ওই দিনের ভ্রমণ। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের রুট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে জেলার সকল ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের জন্যও প্যাকেজ তৈরি করা হবে। পর্যটকরা এই ভ্রমণের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাজার হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে নতুন করে জানার সুযোগ পাবেন।
এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেশি বেশি পর্যটকদের আগমনের কারণে ওই সব স্থানের আর্থ সামাজিক অবস্থার আরও উন্নত হবে। চাঙ্গা হয়ে উঠবে বাণিজ্যিক ব্যবস্থা। নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে গড়ে উঠবে নতুন নতুন স্থাপনা আর স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আমুল পরিবর্তন আসবে এই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায়। বদলে যাবে স্থানীয় মানুষদের জীবনযাপনের পদ্ধতি আর সরকারের বাড়তি রাজস্ব আয় হবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক মেহেদী হাসান।
সারাবাংলা/এনএস