উদ্বোধন হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর
২৭ এপ্রিল ২০২২ ১৮:৫৪
ঢাকা: সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থাকা এই জাদুঘরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসসহ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এই জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেলের কোচে এই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতেই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। দেশের বিস্তীর্ণ রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, জীবনাদর্শ, মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিভিন্ন ছবি, প্রতিকৃতি, ভিডিওসহ ডিজিটাল শিল্পকর্মের মাধ্যমে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর নির্মিত তথ্যবহুল ও মনোমুদ্ধকর ১২টি পৃথক চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে এই রেল জাদুঘর। কোচের একপাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে উঠা, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপষহীন সংগ্রামের ইতিহাস। আরেক পাশের দেয়ালে থাকা ছয় ভাগে রয়েছে দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কাণ্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছেষট্টির ঐতিহাসিক ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল , একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। দেখার সঙ্গে সঙ্গে যেন দর্শকরা ভালোভাবে শুনতে পারেন সেজন্য রাখা হয়েছে হেডফোনের ব্যবস্থা । কোচের এক প্রান্তে রাখা একটি বড় এলইডিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে আরও রাখা হয়েছে জয়বাংলা শ্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ। সেখানে প্রায় একশ বই রয়েছে। বইগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বই। “যাদু মনি” সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ছয়টি চিঠি রাখা হয়েছে। যা বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে দর্শনার্থীদের। দর্শকদের নজর কাড়ার জন্য ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগান। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোষাক ও জিনিসপত্রের প্রতিকৃতি, রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, স্মৃতিসৌধ, তার হাতে লেখা চিঠি। আর কোচ দুটির বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের উপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরাল চিতো।
উদ্বোধনকালে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানাতেই এই আয়োজন। তিনি বলেন, আশা করি গ্রামের মানুষ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন। পাশাপাশি দেখতে পাবেন এবং বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য শুনতে পাবেন।
জানা গেছে, জাদুঘরটি নির্ধারিত স্টেশনে দুই থেকে তিন দিন অবস্থান করবে। সেখানে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে মানুষ বিনামূল্যে জাদুঘরটি ঘুরে দেখতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে জাতির জনকের ইতিহাস।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ