Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যাংকিং খাত এতিমে পরিণত হয়েছে: সিপিডি


১৭ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:১৭

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে একটি বিকলাঙ্গ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংকিং কেলেঙ্কারীর বছর। আর ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাত এতিমে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়নে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) উদ্যোগে “জাতীয় বাজেট ২০১৮-১৯ সিডিপি‘র সুপারিশমালা” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিচার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। বক্তব্য রাখেন, সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ

দেবপ্রিয় বলেন, ব্যাংকিং খাতের রক্ষকরাই তাদের দায়িত্ব পালন না করে বিভিন্ন ফাঁক ফোঁকরে খাতটিকে ধবংস করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি না মেনে ব্যাংকগুলো নিজেরাই মুদ্রানীতি করছে। মুদ্রানীতি ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ পর নিজেরাই তারল্যের ঘাটতির কথা বলে সিআরআর কমিয়ে মুদ্রাপ্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারল্যর ঘাটতি রোগের উপসর্গ মাত্র, কোন রোগ নয়। অথচ একটি বিকলাঙ্গ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সৃষ্টি করে রোগ বানিয়েছেন ব্যাংক মালিকরা।

তিনি বলেন, মুদ্রানীতিতে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছে। অথচ আগে কখনো এটা ১২, ১৩, ১৪ শতাংশের বেশি হত না। বর্তমানে ব্যাক্তিখাতে ঋণপ্রবাহ বেড়ে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশেরও বেশি হচ্ছে। অথচ দেশে কোন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ব্যক্তিখাতে  বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে না। তাহলে এই টাকাটা গেল কোথায়? অন্যদিকে আমদানী বাড়ছে, অভূতপূর্বভাবে। সিপিডি বারবার বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ আমদানীর ভেতর দিয়ে দেশ থেকে অর্থপাচার হচ্ছে কিনা তা মনোযোগ দিয়ে দেখা দরকার। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে আমদানী ব্যয় বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, ঝুকিপূর্ণ আমদানী হচ্ছে, ব্যক্তিখাতে সরকারি বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা যাচ্ছে. কিন্তু ব্যক্তিখাতে কোন বিনিযোগ হচ্ছে না। এটা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে ? তাহলে টাকাটা যাচ্ছে কোথায় ?

বিজ্ঞাপন

দেবপ্রিয় বলেন, প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং আয় এই চারটির মধ্যে সামঞ্জস্য আছে। এই চারটির ভেতর যদি সামঞ্জস্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে আমাদের এমন ধরনের উন্নতি হচ্ছে যেটা নিয়ে চিন্তার বিষয়। অথবা আর একটু পিছনে গিয়ে আমাদের এই সংখ্যাগুলো নিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

দেবপ্রিয় বলেন, এতোদিন আমরা উচ্চতর প্রবৃদ্ধির দিকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছি, তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু উচ্চতর প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক কর্মসংস্থান। বর্তমানে আমাদের যতটুকু কর্মসংস্থান হচ্ছে তার বেশির ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হচ্ছে, সেখানে আয় কম। সেখানে কোন ধরনের অধিকার ও কর্ম পরিবেশ নেই।

বর্তমানে দেশের অর্থনীতি নিয়ে সিপিডির বক্তব্য হলো, প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে আমরা তর্ক বিতর্ক করতে পারি। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় হলো তার ফলাফলটা। ফলাফলটা হলো আমরা এখন আয়হীন কর্মসংস্থানে আছি। কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির বিপরীত। এই যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার পুরোটাই হচ্ছে সরকারি বিনিয়োগের কারণে। গত তিন বছর ধরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রায়ই একই জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। শূন্য দশমিক ২ শূন্য দশমিক ১ ইত্যাদি। উৎপাদনের পরিসংখ্যান, মুদ্রানীতির পরিসংখ্যান এবং আমদানির যে পরিসংখ্যান এটা মিলানো যাচ্ছে না। এটাকে বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যক্তিখাতে যে বিনিযোগ হচ্ছে না এর ফলে আয়হীন কর্মসংস্থানের একটা বড় কারণ বলে আমাদের কাছে মনে হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে গড় আয় বাড়লেও অধিকাংশ মানুষের বিশেষ করে শ্রমজীবিদের আয় কমছে। আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়ে বিবিএস এর প্রতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে এটাকে কমিশনে পরিনত করা যায় কি না তা ভেবে দেখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও মূল প্রতিবেদনে তৌফিকুর ইসলাম খান বলেন, আগামী বাজেটে দেশীয় সম্পদ আহরণের ওপর জোর দিতে হবে। সেজন্য কর আহরণের আওতায় বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১০৫টি কর আহরণকারী দেশের মধ্যে ১০২ তম স্থানে রয়েছে। মুল প্রবন্ধে আরো বলা হয়, আগামী বাজেটে কর্পোরেট করা কমানো উচিত হবে না। সে সঙ্গে বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে নিয়মিত করদাতাদের প্রতি অবিচার করা হবে। তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাজেটে মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা থাকা দরকার।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook 

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর