Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লোকারণ্য কমলাপুর, প্রতিদিন ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছেন ৫৩ হাজার মানুষ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ এপ্রিল ২০২২ ১২:১৯

ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে টানা দুই বছর অনেকটা ঘরবন্দি হয়েই কাটাতে হয়েছে চারটি ইদ। এবার করোনার সংক্রমণ কম থাকায় চলাচলে নেই বিধিনিষেধ। ফলে বাস, লঞ্চ, ট্রেন সব ধরনের গণপরিবহনেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। এই ঢল সামাল দিতে সরকার নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও বিচ্যুতি যেন কাটছেই না।

ইদ উপলক্ষে বুধবার (২৭ এপ্রিল) ট্রেনপথের যাত্রীদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু প্রথমদিনই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। তবে  দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) ট্রেন ছাড়তে কিছুটা দেরি হলেও প্রথম দিনের মতো অবস্থা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গেল দুই বছরের চাপ একসঙ্গে পড়েছে, যাত্রীদের চাপের তুলনায় রেলের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এবারের ইদ যাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে ২৭ হাজার।

প্রথম দিনের মতো ইদ যাত্রার দ্বিতীয় দিনেও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল মানুষের ঢল। যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিরাপত্তা কর্মীদের। খুলনাগামী ট্রেনের যাত্রী বিথি আক্তার বলেন, ‘টিকিট কিনলাম মহাযুদ্ধ করে। এখন সিটে পর্যন্ত এসে বসতেও যুদ্ধ করতে হলো। বছরের রোজার ইদটা সব সময় গ্রামের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করি। গত দুই বছরে যেতে পারিনি, এবার না যেয়ে উপায় নেই।’

সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত এখনো চলমান, সে কারণে অনেকেই পরিবারের অন্য সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। দিনাজপুরগামী ট্রেনের যাত্রী বশির আহমেদ বলেন, ‘ইদ যতই ঘনিয়ে আসবে ততই ঝামেলা বাড়বে, সে কারণে পরিবারের সদস্যদের আগে বাড়ি পাঠাচ্ছি। সকাল সাড়ে ৮টায় ট্রেন ছাড়ার কথা, সাড়ে ৯টা বাজতে চললো এখনো ট্রেন আসেনি।’

বিজ্ঞাপন

তবে ট্রেনের এই শিডিউল বিপর্যয় চললেও এ নিয়ে যাত্রীদের ছিল না কোনো অভিযোগ। আনন্দ নিয়েই ট্রেনের অপেক্ষা করেছেন তারা।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার যাত্রীদের চাপ সামলাতে এরই মধ্যে আন্তঃনগর সকল ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছুটি থাকবে ইদের আগের দিন পর্যন্ত। ডে-অফ প্রত্যাহারের ফলে অতিরিক্ত ৯২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিশেষ ট্রিপ হিসেবে চলাচল করছে। তবে ইদের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না। ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা হবে ২৬ হাজার ৬৬৩টি। ঢাকা থেকে আরও ২টি স্পেশাল ট্রেনের আসন ১৫০০টি।

এছাড়া এবার ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও ২ চলবে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে। এটি ইদের আগের দিন ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এবং ইদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে। দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলবে ইদের আগের দিন ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এবং ইদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে। খুলনা স্পেশাল (মৈত্রীর রেক দিয়ে) খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে চলবে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত। এছাড়া শোলাকিয়া স্পেশাল-১ চলবে ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ। শোলাকিয়া স্পেশাল-২ চলবে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে এই দুইটি ট্রেন চলবে ইদের দিন। এবার ইদে আন্তনগর ট্রেনে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা বিশেষ কামরা যুক্ত করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, প্রতি বছরই ইদের সময় যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যায়। গত দুই বছর করোনার কারণে মানুষ পরিবারের সঙ্গে ইদ উদযাপন পারেনি। আমরা বরাবরের মতো এবারও ঘরমুখো যাত্রীদের বাড়িফেরা নির্বিঘ্ন করতে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, যে সংখ্যক যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান তার এক তৃতীয়াংশ সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। যাত্রীদের তুলনায় আমাদের রেলের সংখ্যা কম। আমাদের ইঞ্জিন ছিল পুরনো, যে কারণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতো। এবার নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হলো আশা করি আগামী দিনগুলোতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কমবে, যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হবে।

ইদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ এখন ফিরে আসার জন্য ১ মে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। ৫ মে যাতায়াতের টিকিট পাওয়া যাবে ১ মে, ৬ মে যাতায়াতের টিকিট কাটতে হবে ২ মে, ৭ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ৩ মে, ৮ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ৪ মে। ২, ৩ এবং ৪ মে টিকিট বিক্রি হবে চাঁদ দেখার উপরে নির্ভর করে।

সারাবাংলা/জেআর/এনএস

ইদযাত্রা কমলাপুর রেল স্টেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর