নড়ছে না গাড়ির চাকা, পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাত্রা
২৮ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৫৬
ঢাকা: প্রচণ্ড গরম, রোজা আর যানজেট বিপর্যস্ত জনজীবন। এক কিলোমিটার পথ পার হতে ঘণ্টা চলে যাচ্ছে; পায়ে হেঁটে চলার পরিস্থিতিও নেই। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে প্রখর রোদের তাপ। এই পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেককে।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর প্রধান সড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোতে গাড়ির লাইন দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই বলেছেন, বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস, সেজন্য দ্রুত কাজ সেরে আগে-ভাগেই বেরিয়ে যাবেন। কারণ অফিস শেষ করে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যাবেন। কিন্তু যানজটের কারণে সেসব চিন্তা আপাতত বাদ দিয়েছেন কেউ কেউ।
বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস। এরপর থেকেই শুরু হয়ে যাবে ইদের ছুটি। সব মিলিয়ে এদিন রাজধানীর প্রতিটি সড়কেই গাড়ির চাপ অনেক বেশি। ঢাকার প্রবেশ পথগুলো থেকে শুরু করে নগরীর প্রধান সব সড়কে দিনের প্রথমভাগে শুরু হওয়া যানজট সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকট হয়েছে। রাস্তায় বের হওয়া নাগরিকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতেই এক জায়গায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল থেকে পল্টন পর্যন্ত সকালে টানা এক ঘণ্টা গাড়ির জট লেগেছিল। এমন জট লাগার তথ্য পাওয়া গেছে রাজধানীর প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী থেকেও। এছাড়া গুলিস্তানের রাস্তা দুপুর পর্যন্ত ঠাসা ছিল গাড়িতে। গাড়ির চাপ ছিল মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, মহাখালী, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, পান্থপথ, মিরপুর রোড, হাতিরঝিল, সায়েন্সল্যাব, গুলশান বাড্ডা রোডেও। প্রায় প্রতিটি ফ্লাইওভারে গাড়ির জট ছিল। আর শপিং মলগুলোর সামনেও অনেক সময় ধরে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
যাত্রীরা বলছেন, গরমের রোজায় এমনিতে বেহাল অবস্থা। তার মধ্যে যোগ হয়েছে যানজটে। যে কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। ধানমন্ডি সাতাশ নম্বর থেকে বনশ্রী যাওয়ার জন্য পান্থপথ রোড ধরে যাত্রা করেছেন ফখরুল আহমেদ। তিনি জানান, পান্থপথ সিগন্যাল পার হয়ে বসুন্ধরার আগে এসে একেবারে গাড়ি থেমে গেছে। ৩৫ মিনিট পর সার্ক ফোয়ারা পার হয়ে কারওয়ান বাজার রেললাইনে আটকে ছিলেন আরও ২০ মিনিট। এরপরে হাতিরঝিলের জ্যাম।
কেউ কেউ আবার যানজটের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে। তানবীর সিদ্দিকী নামের একজন লিখেছেন ‘শুধু ট্রাফিক সমস্যা না, স্বাধীনতার পর থেকে নানান অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের চাপে তিলোত্তমা ঢাকার বেহাল দশা। এক সময়ের প্রিয় এই শহরটাকে অসহ্য লাগছে ইদানিং। শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং। রাস্তা যা ছিল তাই। সবাই ফ্ল্যাট নামক বালাখানা বানিয়ে বসে আছে। রাস্তায় নামলেই দোজখ। তিন কিলোমিটার যেতে কখনো কখনো তিন ঘণ্টারও বেশী লাগছে। অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকে যানজটে। উন্নত দেশে কয়েক লাখ লোকের বসবাস যে শহরে তার সুযোগ সুবিধা ঢাকা থেকে হাজারগুণ ভালো। অথচ ঢাকার লোকসংখ্যা আড়াই কোটির বেশি! থমকে আছে জীবন। সব শক্তি চুষে নিচ্ছে রাস্তা আর অনিয়ম। সম্ভব হলে অন্য শহর বা অন্য দেশে চলে যাওয়াই ভালো। অনেকেই চলে যাচ্ছেন। একবিংশ শতাব্দীতে এভাবে জ্যামে বসে জীবন উৎসর্গ করার কোন মানে আমি অন্তত দেখি না। গত ২০ বছর খাইল ফ্লাইওভার আর মেট্রোরেল নামক প্রকল্প। শুনছি পাতাল রেল প্রকল্প আসছে। মানে নাতি পুতিদের বিয়ে, বাচ্চা সবই হবে জ্যামের মধ্যে।’
মোর্শেদ চৌধুরী নামের একজন লিখেছেন, ‘Banani Road 11 gridlock. Walking is the only option.’
করোনাভাইরাসের মহামারি কাটিয়ে দুই বছর পর স্কুল খোলার পর থেকে শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে রোজা আর ইদের বাজার। বিশেষ করে অফিসে আসা ও যাওয়ার সময় সকাল ও বিকেলে দীর্ঘ যানজটে বিরক্তি বাড়ছে নগরবাসীর। গত ২০ এপ্রিলের পর স্কুল ছুটি হলেও জট থেকে নিস্তার মেলেনি। ইদের কেনাকাটায় নগরবাসীর সঙ্গে রাজধানীর আশেপাশের মানুষের সংখ্যা যুক্ত হয়ে যানজট যেন আরও তীব্র হয়েছে। যানজটে দুর্ভোগে পড়েছেন সব বাহনের যাত্রীরাই। সবকিছু স্থির দাঁড়িয়ে থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা রিকশা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন অনেকে। গন্তব্যে পৌঁছাতে এর বিকল্প নো বলে মন্তব্য তাদের।
দুর্বিসহ এই যানজটে মৃদু তাপদাহ ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। গত তিন দিন ধরে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে সর্বত্র। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সেটি অনুভূত হচ্ছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ তাপপ্রবাহ আরও দুইদিন থাকতে পারে।
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যানজটের জন্য চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে বলেছিলেন, দুয়েক দিনের মধ্যেই রাজধানীর যানজট কমে আসবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট বিভাগ বৈঠকে বসে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেবেন। দুই দিনের জায়গায় সপ্তাহ পার হতে চলেছে কিন্তু রাজধানীর যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
এদিকে, ইদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, কোভিডের পর এবার ইদযাত্রায় সড়কে বেশি চাপের আশঙ্কার পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম