ইদের চাপ নেই গাবতলীতে, বাড়তে পারে রাতে
২৯ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৪৬
ঢাকা: ইদুল ফিতর সামনে রেখে গাবতলে ঘরমুখী মানুষের চাপ নেই। একদম সকালের দিকে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে মানুষের কোলাহল। কেবল কাউন্টারগুলোর সামনেই টিকিটের জন্য কিছু মানুষের জটলা দেখা গেছে। তবে টার্মিনালের পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাতের দিকে ঢাকা ছেড়ে বাড়ির পথে থাকা মানুষের চাপ বাড়তে পারে।
ইদুল ফিতর সামনে রেখে সরকারি ছুটির প্রথম দিন আজ শুক্রবার (২৯ এপ্রিল)। তাই সকাল থেকেই রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। একই চিত্র ছিল গাবতলীতেও। হাসিমুখে যাত্রীদের দেখা গেছে বাড়ির পথে রওনা দিতে। তবে বেলা বাড়তে বাড়তে সেই চাপও কমে যায়।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর ও বাংলাদেশ বৃহত্তম বাস টার্মিনাল গাবতলী এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই বছরের বিপরীত চিত্র এবার। আগের দুই বছর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ইদেও ঢাকা ছেড়েছে খুব কম মানুষই। এবারে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বলতে গেলে স্বাভাবিক হয়ে আসায় মানুষ ছুটছে বাড়ির পথে। ফলে গত দুই বছরের তুলনায় ইদে ঘরমুখী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে করোনার আগে ‘স্বাভাবিক’ যে ইদযাত্রা, তেমন চিত্রও নেই গাবতলীতে। সচরাচর এই সময়ে গাবতলীতে যাত্রীর তুমুল চাপ, গাড়ির চাপে দীর্ঘ যানজটের চিত্রই দেখা যেত। কিন্তু এবারে যাত্রী থাকলেও জট নেই। মহাসড়কে কেবল যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে কিছুটা।
গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা গেল, শুক্রবার ভোর থেকে যাত্রীর চাপ শুরু হয়েছিল। সকাল ৯টা পর্যন্তও গাবতলী থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর পথে একের পর এক বাস ছেড়ে গেছে। সে সময় পুরনো ইদযাত্রার আমেজ ফিরে এসেছিল এই টার্মিনালে। তবে এরপর থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে গাবতলী। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক দিনের মতোই বাসগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না যাত্রীদের।
কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মীরা বলছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সময়ের গাড়িগুলোর টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এই সময়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাড়তি ট্রিপও যুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানিতেই। ফলে ইফতারের পর থেকে গাবতলীতে যাত্রী ও বাসের চাপ বাড়বে।
বাসের কোনো শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. মাইনুল বলেন, ‘না, আমাদের বাসে এখনো কোনো শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে না। ফেরিঘাটে তেমন চাপ নেই। ঠিক সময়েই বাস আসছে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে বাসের ট্রিপ বাড়বে। তখন ফলে রাতে ফেরিঘাটে চাপ তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে কাল থেকে একটু চাপ হতে পারে।’
আরও কয়েকটি বাস কাউন্টারের মাস্টাররাও বললেন, এখন পর্যন্ত টাঙ্গাইল থেকে শুরু করে রংপুর বা রাজশাহী পর্যন্ত রুটে বড় ধরনের কোনো যানজট দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাড়ে কিছুটা রাস্তায় ধীরগতি থাকলেও গাড়িগুলো মহাসড়গকে স্বচ্ছন্দ্যেই চলাচল করছে। এতে করে সব গাড়িই সময়মতো যাচ্ছে এবং আসছে। পরিস্থিতি এরকম থাকলে শিডিউল বিপর্যয় হবে না বলেই আশা করছি। সেক্ষেত্রে প্রচণ্ড গরম থাকলেও যাত্রাপথে মানুষের ভোগান্তি হবে না।
এদিকে, কোনো কোনো বাস কাউটারে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ শুনে পাঁচ কাউন্টারকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বাস মালিক সমিতি ও বিআরটিএ’কে এ বিষয়টি বিশেষভাবে নজরদারির জন্য ভোক্তা অধিকার অনুরোধ করেছে।
গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ ও র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক রয়েছেন। দুপুরের দিকে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোবাইল নিয়ে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। তারা জানান, এ পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর তারা পাননি। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সজাগ রয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার সকালে রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার সড়ক ভালো আছে। গাজীপুরের যে সমস্যা ছিল, আমার মনে হয় এবার আর সেই সংকট হবে না। আমরা তিনটি ফ্লাইওভার খুলে দিয়েছি গাজীপুরে। সেখানে এখন নিয়মিত গাড়ি চলছে।
তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গের দিকে সবসময় ইদযাত্রায় কিছু সমস্যা হয়। সেটিও আমরা সমাধান করেছি। নলকা ছিল দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমরা নলকা সেতু করে ফেলেছি। কাজেই এই রুটেও কোনো সংকট হবে বলে আমার মনে হয় না।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, একটু ভিড় দেখলেই অনেক সময় অনেক চালক গাড়িকে রং রোডে নিয়ে চলে যান। এরপর তার পেছনে পেছনে আরও গাড়ি যায়। উল্টো দিকের সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পুরো এলাকা অনেকক্ষণ ধরে যানজটে থাকে। এবার এই বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। সড়কে গাড়িগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে চললে কোনো সমস্যা হবে না।
ইদযাত্রায় যেন দুর্ভোগ না হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর