ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জট ছাড়াই যান চলছে
২৯ এপ্রিল ২০২২ ১৯:১৫
ঢাকা: রাজধানী থেকে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের দিকে ভোগান্তি ছাড়াই এখন পর্যন্ত ইদে বাড়ি ফিরছে যাত্রীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও রাস্তায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো বড় জট লাগেনি বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এই মহাসড়কে বর্তমানে বাস ও প্রাইভেট গাড়ির চাপ বেশি হলেও রাস্তায় যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে যাত্রীরাও।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে।
এদিন সকাল ৭টায় রাজধানীর আরামবাগ এলাকার বিভিন্ন কাউন্টারে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। তবে কাঙ্ক্ষিত পরিবহন পেতে খুব একটা বেশি সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান যাত্রীরা৷
প্রায় একই অবস্থা সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীর বাস টার্মিনাল এলাকাতেও। নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনীসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকার গাড়ি এখান থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে গাড়ি পর্যাপ্ত থাকায় খুব একটা বেশি ভোগান্তি নেই যাত্রীদের। একইসঙ্গে দেখা গেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসও।
ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করা এশিয়া পরিবহনের চালক মো. জসিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগের ইদ দেখা যেত এক ট্রিপেই দিন শেষ। তবে গতকাল মারলাম চার ট্রিপ আর আজকেও আল্লাহ দিলে দুই নম্বর ট্রিপ মারবো এখন। যাত্রীও আছে মোটামুটি।’
এদিন সকাল ৯ টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় তুলনামূলক কম গাড়ির সংখ্যা দেখা যায়৷ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইদযাত্রার আগে সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত থাকা মেডিয়ান গ্যাপগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে এখানে ইউলুপ সিস্টেম চালু করার কারণে কোনো পরিবহনের আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
সরেজমিনে মেঘনা ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়, ধীরগতিতে হলেও রাস্তায় জট বাধা ছাড়াই গাড়ি চলছে। সোনারগাঁও-মোগরাপাড়া এলাকায় বাজারের কারণে কিছুটা ধীরগতি এই এলাকার রাস্তায়।
দাউদকাদি গোমতী ব্রিজ এলাকাতেও প্রায় একই রকমের দৃশ্য দেখা গেলেও তুলনামূলক ধীর গতিতে চলছে গাড়ি মাধাইয়া-চান্দিনার বাজার সংলগ্ন সড়কে। মাঝে মধ্যে একটু জট দেখা গেলেও হাইওয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, সুয়াগাজী, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী মহিপাল, বারইয়ারহাট, সীতাকুন্ড এলাকায় গাড়ি ধীরগতিতে চললেও কোথাও জ্যাম দেখা যায়নি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেও তাই দেখা গেছে উচ্ছ্বাস।
বসুরহাটের উদ্দেশ্যে গাড়িতে ওঠা যাত্রী নাজমা আক্তারের সঙ্গে নিমসার সড়কে কথা হয় প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, ‘গত কাইল ছুটি পাইলাম। আর তাই দেরি না কইরা আইজকাই বাইর হইয়া গেলাম। গতবার বেহানে বাইর হইয়াও ইফতার ধরতে পারি নাই। এবার তো প্রায় অর্ধেকই আইসা পড়লাম নিরিবিলি। সমস্যা হয়নি।’
বাসভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে ইদে ঝামেলামুক্ত ভাবে বাড়ি ফিরতে পারার এই উচ্ছ্বাস।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী লেনে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লেগুনার চাপ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। আর সেটার কিছুটা প্রভাব দেখা গেছে দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায়।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই বের হয়েছে তাই গাড়িও বেড়েছে রাস্তায়। এ জন্য যানবাহনের চাপে একটু ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া কোথাও কোনও সমস্যা নেই। আমরা মাঠে কাজ করছি। এবারের ইদযাত্রার বাকি সময়টাও আশা করছি বড় কোনো সমস্যা হবে না।’
হাইওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার এলাকার দিকে কোনো সমস্যা নেই। যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। আমিও টহল দলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। একটু আগে গৌরীপুরের দিকে কিছু মাইক্রোবাসের জট লেগে ছিল। সেটি ক্লিয়ার করে দিয়ে এলাম। এখন স্বাভাবিকভাবেই চলছে গাড়ি। আশা করছি, ইদযাত্রায় এবারও সব কিছুই স্বাভাবিক থাকবে।’
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসড়কে যাত্রীবাহী পরিবহন ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী যান চলাচল করে। ইদযাত্রায় এই মহাসড়কে যেনো যাত্রীদের কোনো দুর্ভোগ না হয় সেদিকে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কের যেসব স্থানে বাজার আছে সেগুলোসহ মূল রাস্তায় দেখা যায় একটি গাড়ি নষ্ট হলেই রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আবার দেখা যায় সাধারণ মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে ভুলভাবে। এক্ষেত্রে আসলে সব মিলিয়ে যে বিশৃঙ্খলাগুলো হয় তাতেই যানজট লেগে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা উদ্ধার কাজ চালানোর সময়টাও পাই না। অল্প সময়েই গাড়ি ভুল রাস্তায় ভিন্ন লেইনে চলে আসে। আর এগুলোর কারণে সৃষ্টি হয় জ্যাম। আর তাই এবার প্রতিটা মোড়ে আমাদের সদস্যরা থাকবে নজরদারির জন্য।’
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এই পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক আছে। আশা করছি বাকি সময়ও এভাবেই চালাতে পারব আমরা। সজাগ দৃষ্টি রেখে আমরা রাস্তায় সবার ইদযাত্রা সহজ করতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’
সারাবাংলা/এসবি/একে