Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বোরোর মাঠে মাড়াইয়ের ব্যস্ততা, ধানের দামে কৃষকের স্বস্তি

আমজাদ হোসেন মিন্টু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৪১

ছবি: সারাবাংলা

বগুড়া: জেলায় বোরো ধানের মাঠে মাঠে এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকদের। অনেক কৃষক আবার ঝড়-বৃষ্টির মুখে লোকসানের শঙ্কায় তড়িঘড়ি করেই ধানকাটা শুরু করেছেন। তবে ধানের বাজারদর কৃষকদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার নিয়ে কৃষকরা খুশি।

কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তবে এবার ধানের বাজারও বেশি। এই বাজারদর অব্যাহত থাকলে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন না।

বিজ্ঞাপন

বগুড়া কৃষি বিভাগ জানায়, এবার চলতি বোরো মৌসুমে বগুড়ায় এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমি। তবে শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে। গত সপ্তাহে ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক জমির ফসল নুয়ে পড়লেও খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি ফলনে। আবার ঝড়-বৃষ্টি বাড়তে পারে— এমন আশঙ্কায় অনেক কৃষক তড়িঘড়ি করে ধান কেটে ফেলছেন।

কৃষি বিভাগের হিসাব বলছে, ধান কাটা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। মূলত ইদুল ফিতরের পর ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মৌসুম শুরু হবে। এখন নিচু এলাকার জমিসহ যারা আগাম ধান লাগিয়েছিলেন, তারা ধান কেটে তুলছেন, মাড়াই করছেন।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, আদমদিঘী, গাবতলী ও শেরপুর উপজেলায় এখন পর্যন্ত বেশি ধান কাটা হয়েছে। এবার জেলায় ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধরাণ করা হলেও আবাদের মতোই উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের রওশান আলী ফটিক আট বিঘা জমিতে জিরাশাইল ধান আবাদ করে বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ মন ধান পেয়েছেন। ফলন ভালো হলেও এবার উৎপাদন খরচও বেশি বলে জানালেন এই কৃষক। বললেন, এক হাজার ২০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছেন। তবে উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। আবার গত বছর বিঘা প্রতি জমির ধান কাটতে মজুরি ছিল ৩ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এবার সেটি বেড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। ফলে আবাদের খরচ অনেক বেশি। তারপরও এই দামে বিক্রি করলে খুব লাভ না হলেও অন্তত লোকসান হবে না।

বিজ্ঞাপন

নন্দীগ্রামের দাতমানিকা গ্রামের কৃষক গোলাম হোসেন বলেন, ১০ বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছি ২০ থেকে ২২ মণ করে। গত বছরের চেয়ে এবার ধানের দাম মণপ্রতি প্রায় থেকে দেড়শ টাকা বেশি। এই দাম পড়ে গেলে আমরাও বিপদে পড়ে যাব।

ধান কাটা ও মাড়াইয়ের নিযুক্ত শ্রমিকদের সর্দার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই গ্রামের হান্নান জানালেন, তারা একই গ্রাম থেকে ২২ জন মথুরাপুর ধান ক্ষেতে কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করছেন বিঘা প্রতি ৪ হাজার টাকা চুক্তিতে। এই দিনমজুর দলের একজন রাসেল আহম্মেদ, যিনি মূলত শিক্ষার্থী। বাবা অসুস্থ থাকায় পরিবারের কথা ভেবেই একটু উপার্জনের আশায় কলেজ বন্ধের ফাঁকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতে এসেছেন।

মজুররা বলছেন, গত বছরের চেয়ে মজুরি তারা বেশিই পাচ্ছেন। তবে দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় সামান্য বাড়তি এই মজুরি খুব বেশি আসবে না। যাতায়াত ও থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য খরচের পর তাদের হাতে তেমন কিছু থাকে না।

এদিকে, মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হলেও মোকামে ধানের সরবরাহ যথেষ্ট বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ অঞ্চলের মধ্যে ধানের সবচেয়ে বড় মোকাম রনবাঘা বাজারের ধান ব্যবসায়ীরা বলছে, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মৌসুম শুরুর দিকে হলেও ধানের সরবরাহ ভালো। প্রতিদিন এই মোকামে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক ধান বেচাকেনা হচ্ছে। তবে ইদের কারণে চাতাল ও মিল বন্ধ হয়ে গেলে ভেজা ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়তে পারেন।

ধানের ব্যবসায়ী মেজবাউল জানালেন, প্রতিমণ ভেজা ধান ৯শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা এবং শুকনো ধান এক হাজার টাকা থেকে ১১শ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় মৌসুমের এই সময়ে বর্তমানে ধানের বাজার দর ঊর্ধ্বমুখী বলতে হবে।

বগুড়া কৃষি বিভাগে জানিয়েছে, এখন বোরো ধানের আগাম জাতের আবাদ যারা করেছেন, তারা ধান কাটতে শুরু করেছেন। বিঘা প্রতি এখন পর্যন্ত গড় উৎপাদন ২২/২৩ মণ।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসরাণ বিভাগের উপপরিচালক দুলাল হোসেন জাানান, এবার ধানের উৎপাদন ও বাজার— দু’টোই ভালো। তবে ইদের পর পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে বিঘা প্রতি উৎপাদনের আরও সঠিক তথ্য জানা যাবে।

সারাবাংলা/টিআর

ধান মাড়াই বগুড়া বোরো ধান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর