দেশে এপ্রিল ৯ প্রতিবন্ধীসহ ধর্ষণের শিকার ৭১ জন
১ মে ২০২২ ২০:৪৪
ঢাকা: এপ্রিল মাসে দেশে ৭১ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৯। এই ৭১ জনের মধ্যে আবার সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৪ জন। এছাড়াও দুই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এপ্রিল মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সংস্থাটির তথ্য বলছে, মার্চ মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৬৯ জন এবং ৮১ নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ছিল ১০৩টি ও জানুয়ারি মাসে ৬৫টি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফেরে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী এপ্রিল মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা (ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতা) আগের মাসগুলোর মতোই অব্যাহত রয়েছে। গত চার মাসের হিসাব বলছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে।
এমএসএফের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি। এদিকে দেশে ৩ এপ্রিল থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়। বিগত মাসগুলোর মতোই রমজান মাসেও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়াকে উদ্বেগজনক মনে করছে এমএসএফ।
এপ্রিল মাসের হিসাব বলছে, এ মাসে ধর্ষণের শিকার ৭১ জনের মধ্যে ৪৯টি শিশু ও কিশোরী। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ছয় কিশোরী। এ মাসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ছিল ১৭টি, যৌন হয়রানি ১৯টি ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৮টি। একই সময়ে তিনটি শিশু ও ৩৮টি কিশোরীসহ ৯২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন এক জন নারী। অপহরণের শিকার হয়েছে একটি শিশু, দুইটি কিশোরী।
অন্যদিকে এপ্রিল মাসে শিশু, কিশোরী ও নারীসহ চার জন নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়াও এপ্রিল মাসে পাঁচ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন শিশু-কিশোরী-নারীসহ ৭১ জন। এর মধ্যে শিশু ও কিশোরীর সংখ্যা ২১। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।
এ মাসে ধর্ষণের দুইটি ঘটনা সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। পৃথক দুই ঘটনায় দুই সালিশে সাতটি পরিবারকে সমাজপতিরা একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যা বেআইনি বলে মনে করে এমএসএফ।
এপ্রিল মাসে তিনটি মৃত ও একটি জীবিত নবজাতককে বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এমএসএফ এসব ঘটনাকে অমানবিক ও নিন্দনীয় হিসেবে উল্লেখ করে বলছে, এরকম শিশুদের কী কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপণের চেষ্টা করছে না।
এমএসএফ মনে করে, দেশে ধর্ষণ, শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা যে হারে ঘটে চলেছে, তাতে করে সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব, বিশেষ করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা দেখা যায় না। বিচারহীনতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
কিশোরী ধর্ষণ গণধর্ষণ ধর্ষণ নারীর প্রতি সহিংসতা যৌন নির্যাতন শিশু ধর্ষণ