ইদের আমেজ নেই হাওর পাড়ের ৩১ গ্রামে
১ মে ২০২২ ২২:৩১
সুনামগঞ্জ: একদিন পরই ইদুল ফিতর। কিন্তু সেই ইদের আমেজ নেই সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের ৩১ গ্রামে। স্থানীয়ভাবে চ্যাপটির হাওর নামে পরিচিত এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষেরই জীবিকা বোরো ফসলনির্ভর। গত ৬ এপ্রিল রাতে বৈশাখীর বাঁধ ভেঙে গেলে প্রভাব পড়েছে সেই জীবিকায়।
হাওরবাসী বলছেন, বৈাশাখীর বাঁধ ভেঙে তাদের সর্বনাশ ঘটেছে। হাওরপাড়ের কোনো কৃষকই ধান ঘরে তুলতে পারেননি। হাজারও কৃষকের সারাবছরের স্বপ্ন তাই এখন পানির নিচে। এই হাওরপাড়ের মানুষের কাছে তাই ইদ এসেছে কষ্ট নিয়ে।
সরকারি হিসাব বলছে, চাপতির হাওরে চার হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। সব মিলিয়ে এই এলাকার কৃষকদের কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরপাড়ের করিমপুর গ্রামের এলাজুর রহমান ও আয়েশা আক্তার পানির নিচ থেকে সামান্য পরিমাণ আধাপাকা ধান তুলেছিলেন ডুব দিয়ে। সেই সামান্য ধান শুকানোর কাজই করছিলেন। জানালেন, তারা বর্গা চাষি। গত চার বছর সামান্য জমি বর্গা করেছেন। ফসল ভালো হওয়ায় এবার সাহস করে ২০ কেয়ার জমি রংজমা নেন।
এলাজুর ও আয়েশা বলেন, জমি আবাদের টাকা জোগার করেছিলেন মহাজনি সুদের টাকা দিয়ে। একশ টাকায় মাসে ১০ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে ৩০ হাজার টাকা ছয় মাসের জন্য এনেছিলেন। ধান কাটা শেষ হলে ধান বিক্রি করে লাভের ১৮ হাজার টাকাসহ ৫৮ হাজার টাকা দেওয়ার কথা তাদের। এখন ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সেই টাকা কীভাবে ফিরিয়ে দেবেন, সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। সেই সঙ্গে পাঁচ জনের সংসারে খাবার জোগানের চাপ তো আছেই।
কেবল এলাজুর ও আয়েশা নয়, এই এলাকার অন্য কৃষকরাও জানাচ্ছেন একই পরিস্থিতির কথা। প্রান্তিক এই কৃষকদের বেশিরভাগই আবাদের টাকা ধারে নিয়েছেন। এখন তাদের সবার মাথায় হাত। হাওরপাড়ের বয়োজ্যেষ্ঠরাও বলছেন, এবারের ঈদ কষ্ট নিয়ে এসেছে তাদের জন্য।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাঁধ ভেঙে যাদের ফসল তলিয়ে গেছে, ইদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হবে।
সারাবাংলা/টিআর