Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইদ উদযাপনে প্রস্তুত দেশ, নিরাপত্তা জোরদার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ মে ২০২২ ২২:৩৫

ইদুল ফিতরের জামাতের জন্য চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: রাত পোহালেই পবিত্র ইদুল ফিতর। এরইমধ্যে ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা। বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও মোটরসাইকেলে চেপে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছে অন্তত এক কোটি মানুষ। একদিকে গ্রাম ও নগর, অন্যদিকে ফাঁকা ঢাকা। আর এ সবকিছুর পাহারায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া ইদ জামাত নিরাপত্তায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীতে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের ইদে সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট নেই। সবাই নির্বিঘ্নে ইদ পালন করতে পারবেন। কোথাও কোনো জঙ্গি হামলারও আগাম তথ্য নেই। করোনাকালীন দুই বছর পর সবাই আনন্দে ইদ পালন করতে পারবেন। এরপরেও জাতীয় ইদগাহসহ সারাদেশে র‌্যাব ও পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় ইদগাহ ময়দানে ইদের জামাত সুষ্ঠুভাবে আদায়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজধানীতে মসজিদ ও ইদগাহ মিলে মোট ১ হাজার ৪৬৮টি ইদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি জামাতেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। জাতীয় ইদগাহ ময়দানে ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করা হবে। থাকবে আর্চওয়ে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইদগাহে প্রবেশের সময় ছাতা ও জায়নামাজ ছাড়া আর কোনো কিছু সাথে রাখা যাবে না।

ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘দু’চারটি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এত বড় শহরে দুয়েকটি ঘটনা ঘটবেই। কারও সাধ্য নেই তা রুখে দেওয়ার। পুলিশের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতন হওয়া দরকার। আপনার সম্পদ ও জীবন রক্ষার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে আপনার। এরপর রাষ্ট্রের। আপনি যদি আপনার সম্পদ অরক্ষিত রাখেন তাহলে সেটা তো বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি রেললাইনে শুয়ে থেকে যদি চিন্তা করেন পুলিশ এসে উদ্ধার করবে তাহলে সেটি সমীচীন হবে না। একইভাবে নিজের সম্পদ ও জীবন প্রথমে নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘৫০টি থানায় আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য প্রতিরাতে দায়িত্ব পালন করবে। ৫০০ টির মতো মোবাইল টিম রাতের বেলা কাজ করবে। অনেক জায়গায় সিসিটিভি লাগানো আছে। সেন্ট্রালি মনিটরিং করা হবে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ইদুল ফিতরে ঢাকা শহর অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, বাসা বাড়ি অলিগলি সবকিছু ফাঁকা থাকবে। এই ফাঁকা ঢাকা পাহারায় র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। ফাঁকা ঢাকায় যাতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ না ঘটে সেজন্য র‌্যাব সদস্যরা সজাগ থাকবে। ইদে সড়ক ফাঁকা থাকবে। এই সময়টাতে ফাঁকা সড়কে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায় অনেকে। অনেকের প্রাণহানি ঘটে। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো রোধে র‌্যাবের মোবাইল টিম কাজ করবে।’

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সারা দেশব্যাপী ইদ উযযাপন নির্বিঘ্ন করতে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় ইদগাহের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া, দিনাজপুরের বড়মাঠ, রাজশাহীর শাহ মখদূম মাঠসহ বড় বড় জামাতগুলোতে র‌্যাবের নিরাপত্তা টহল টিম কাজ করবে। ইদ জামাতের আকার ভেদে র‌্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।’

ডিজি বলেন, ‘ইদের আগে ও পরে টিকিট কালোবাজারি, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে এবং হবে। সড়ক পথে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা নেওয়া প্রতিরোধ করা হচ্ছে। বিনোদন কেন্দ্র বা যাত্রাপথে নারীরা যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে সাদা পোশাকে এবং পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবে। টহল টিমের পাশাপাশি স্পেশাল টিম সবসময় প্রস্তুত থাকবে। র‌্যাব সদর দফতরেও একটি স্পেশাল টিম প্রস্তুত থাকবে। সেইসঙ্গে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টিম প্রস্তুত থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে যাতে তারা মুভ করতে পারে। যেকোনো প্রয়োজনে ০১৭৭৭৭২০০২৯ (কন্ট্রোল রুমের নাম্বার) নম্বরে কল করা যাবে।’

নাশকতা রোধে র‌্যাবের ভূমিকার বিষয়ে ডিজি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের জঙ্গি তৎপরতা ও নাশকতা মোকাবিলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইদ জামাতকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট জঙ্গি হামলার কোনো তথ্য নেই। তবে র‌্যাব বরাবরই আত্মতুষ্টিতে ভোগে না। র‌্যাবের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নগরবাসী নির্বিঘ্নে ইদ উৎসব পালন করতে পারবেন।’

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইদুল ফিতর উপলক্ষে জেলায় ব্যাপকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোথাও কোনো নিরাপত্তা ঘাটতি রাখা হয়নি। জেলায় শোলাকিয়া ইদগাহ ময়দান থাকায় সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা সেখানে রাখা হয়েছে। বাস, ট্রেন, স্টেশন সবখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।’ পুলিশের টহল টিমও সজাগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বৃহত্তম ইদগাহ মাঠ এখন দিনাজপুরের বড় মাঠ ইদগাহ ময়দান। সেখানে কয়েক লাখ মুসুল্লি একসঙ্গে ইদের জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। এই মাঠ ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ নামাজ পড়তে আসে। এই জামাতকে ঘিরে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে মাঠে এবং মাঠের বাইরে অবস্থান করবে। এছাড়া টহল পুলিশ সব সময় পেট্রোলিং অবস্থায় থাকবে।’

সারাবাংলা/ইউজ/পিটিএম

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইদুল ফিতর দেশ নিরাপত্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর