Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাইকে ডেকেও মিলছে না যাত্রী!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ মে ২০২২ ২৩:১৪

ঢাকা: সোমবার (২ মে) সকাল ৭ টা থেকে কমলাপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে মাইকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য যাত্রী ডাকছেন রবিন। প্রায় এক ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ১০ জন যাত্রীও মেলেনি ঢাকা-কুমিল্লাগামী এশিয়া এয়ারকন কাউন্টারে। প্রায় একই অবস্থা আরামবাগের লাল-সবুজ পরিবহনের কাউন্টারেও। এই এলাকায় থাকা বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর চেয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি।

একটু পরেই নটরডেম কলেজের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করা সোহাগ, গ্রিনলাইনসহ বিভিন্ন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের কাউন্টার। তবে এখানে যাত্রীদের ডাকাডাকি করা হচ্ছে না তেমনভাবে। যারা অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছেন তাদের নিয়েই গাড়ি রওয়ানা হচ্ছে গন্তব্যে।

বিজ্ঞাপন

হানিফ ফ্লাইওভারের সামনে টিকাটুলির মোড়ে যেতেই অবশ্য দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। রাজধানীসহ এর আশেপাশের বিভিন্ন পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেরিতে ছুটি হওয়ার কারণে অনেকেই ২ মে ফিরছেন বাড়িতে।

টিকাটুলি মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকছিল কুমিল্লাগামী তিশা পরিবহনের একটি বাসের কর্মী। মাসুদ নামে একজন হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তুলনামূলক কম যাত্রী থাকার কথা। তিনি সারাবাংলাকে বললেন, ‘আগে ইদের টাইমে বাড়ি যাইতে মাইনসেরে ৫০০ কইলে হেইডা দিয়াই যাইতো। আর এবার কেমনে যে কি হইতাছে কিছুই বুঝতেছি না। পাবলিকরে ৩০০ কইলেই কয় এই টেকা দিয়া নাকি এসিতে যাইতে পারে। বন্ধটা বেশি হইয়া এবার আমাগোর সর্বনাশ হইয়া গেছে।’

ভেতরে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়। গার্মেন্টসকর্মী পরিচয় দিয়ে শাহানা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগেই ছুটি পাইছি। কিন্তু হাতের কাজ শেষ করে আজকে বাড়িতে যাচ্ছি মেয়েসহ। তবে এবার গাড়ি পেতে কোনো কষ্ট হয় নাই। শুধু ভাড়াটা একটু বেশি রাখছে। ২২০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডে গিয়েও দেখা যায় যাত্রীর খরা। তুলনামূলকভাবে বেশি বাস থাকা এই এলাকায় যাত্রী আসলেই আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে ভিন্ন রকমের এক প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন কোম্পানির পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের নিজেদের গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করছেন।

সায়দাবাদ জনপথ মোড়ে ঢাকা-কোম্পানীগঞ্জ রুটে চলাচল করা তিশা গোল্ডেন পরিবহনের চালক সোহেল রহমানের সঙ্গে কথা হলে জানা যায় সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ১২ জন যাত্রী পেয়েছেন মাত্র। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্যবার ইদে দুই দিকে মিলাইয়া চার ট্রিপ দিতাম। আর এবার দুই ট্রিপের যাত্রী পাইতেই খবর হইয়া যাচ্ছে। ট্রিপ না হইলে তো টাকা পাব না। আমাদের ইদ এবার তাই কেমন যায় আল্লাহই জানে।’

এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে যাত্রীরা বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা জানালে সোহেল বলেন, ‘হ্যাঁ, নইলে তো মালিকে কিসসু পাবে না। আমরাও না খাইয়া মরুম। এমনে এই রোডের ভাড়া ৪৭৫ টাকা। তবে এই দুইদিন ৫৫০ টাকা নিচ্ছি ইদের বকশিস হিসেবে।’

কাঁচপুর রোডে ঢাকা-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী হিমাচল পরিবহনের চালক জালাল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে ইদের সময় যাত্রীর চাইতে গাড়ি কম থাকতো। আর তাই গাড়ি ঢাকা ঢুকলেই ভরপুর হয়ে যেত। কিন্তু এবার চার পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রী পূর্ণ হচ্ছে না। বন্ধটা বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হইছে।’

একদিকে যখন পরিবহন শ্রমিকদের এমন অবস্থা তখন ভিন্নদিকে যাত্রীদের কণ্ঠে অবশ্য ইদের আগেই আনন্দের রেশ ভিড় এড়িয়ে কোনো প্রকার ঝক্কি পোহানো ছাড়াই বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়ি পেয়ে। এমন অবস্থায় বেশ কিছু পরিবহনের মালিক অবশ্য গাড়ির কর্মচারীদের ইদের ছুটিও দিচ্ছেন সুযোগমতো।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর, দাউদকান্দি, মাধাইয়া, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, বারৈয়ারহাট, সীতাকুন্ড এলাকায় গাড়ির কোনো জট ছিল না রোববার (১ মে) ও সোমবারেও (২ মে)।

কুমিল্লা হাইওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার এলাকার দিকে কোনো সমস্যা নেই। যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। আমিও টহল দলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। যেখানেই জট লাগার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি ইদযাত্রার মতো ফিরতি যাত্রায়ও এবার সব কিছুই স্বাভাবিক থাকবে।’

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসড়কে যাত্রীবাহী পরিবহন ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী যান চলাচল করে। ইদযাত্রায় এই মহাসড়কে যেনো যাত্রীদের কোনো দুর্ভোগ না হয় সেই পদক্ষেপ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কের যেসব স্থানে বাজার আছে সেগুলোসহ মূল রাস্তায় দেখা যায় একটা গাড়ি নষ্ট হলেই রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আবার দেখা যায় সাধারণ মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে ভুলভাবে। এক্ষেত্রে আসলে সব মিলিয়ে যে বিশৃঙ্খলা হয় তাতেই যানজট লেগে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা উদ্ধার কাজ চালানোর সময়টাও পাই না। অল্প সময়েই গাড়ি ভুল রাস্তায় ভিন্ন লেইনে চলে আসে। আর এগুলোর কারণে সৃষ্টি হয় জ্যাম। আর তাই এবার প্রতিটা মোড়ে আমাদের সদস্যরা আছে নজরদারির জন্য।’

হাইওয়ে পুলিশের এই পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক আছে। আশা করছি বাকি সময়ও এভাবেই চালাতে পারব আমরা। সজাগ দৃষ্টি রেখে আমরা রাস্তায় সবার ইদযাত্রা সহজ করতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

৩৫ যাত্রীকে হত্যা মাইক যাত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর