বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ, ঢাকায় ইদ উদযাপন পথে পথে
৩ মে ২০২২ ১৭:৫২
ঢাকা: টানা দুই বছর পর চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানীতে ইদ আনন্দ। সকালে ঝুম বৃষ্টির পর দুপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েছেন। তবে ইদ আনন্দে অনেকটাই ভাটা পড়েছে অধিকাংশ বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকায়। শিশুপার্ক, জাদুঘরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় রাজধানীর টিএসসি, শাহাবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্কে ঘুরে বেড়িয়েছেন সকলে। ছবি তুলছেন, ঘুরছেন, গল্পে করে সময় কাটাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার কেউ তুলছেন সেলফি।
গত দুই বছরের মতো এবারও ইদের দিন জাতীয় জাদুঘর ও তার আওতাধীন শাখা জাদুঘরগুলো বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরও। তবে খোলা রয়েছে মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুই বছর উৎসব করে ইদ উদযাপন করতে না পারায় এবারের ইদ মানুষের জীবনে এনেছে বাড়তি আনন্দ। এই আনন্দ উপভোগ করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই। মূল উদ্দেশ্য থাকে ইদ উপভোগের পাশাপাশি নিজেদের মতো করে একটু অবসর কাটানো। আর পরিবারের ছোট সদস্যরা চায় শিশু পার্কের মতো জায়গায় গিয়ে হৈ হুল্লোড় করতে। কিন্তু সে সুযোগ এবারও পাচ্ছে না শিশু-কিশোররা। গত দুই বছরের মতো এবারও রাজধানীর একমাত্র শিশুপার্কটি বন্ধ থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো মাঠে-ঘাটেই উদযাপন করতে হচ্ছে ইদ আনন্দ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বেশিরভাগই ছিল শিক্ষার্থী। যারা ইদের ছুটিতে হলেই ছিলেন কিংবা ঢাকা শহরেই বসবাস করেন ইদের দিনে তাদের একটা বড় অংশের আড্ডা ছিলো পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসিতে ছিল সব ধরনের মানুষের সমাগম। এখানে বড়দের সংখ্যাই ছিল বেশি। বন্ধুরা মিলে চায়ের দোকানে গল্পে-আড্ডায় কাটিয়েছেন ইদের বিকেল। কেউ কেউ তুলছেন ছবি।
তবে সবচেয়ে সমাগম দেখা গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে নাগরদোলা বসিয়ে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা একরকম মেলার আয়োজন করেছেন। ছোট ছোট দোকানে খেলনা কেনার বায়না ধরছে শিশুরা। বিকালের স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় দলবেধে হেঁটে বেড়িয়েছেন অনেকেই। শাড়ি পড়ে খোপায় ফুল গুজে ভালবাসার মানুষের সঙ্গে যারা ঘুরতে বেড়িয়েছেন, তারা বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ছবি তুলে।
স্বাধীনতা জাদুঘর চত্বর, শিখা অনির্বাণের কাছেও ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেকে। এখানে ঘুরতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি খুলনাতে থাকেন। পেশায় ব্যবসায়ী। ঢাকাতে বোনের বাসায় প্রথমবারের মতো ইদ পালন করছেন। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম বাচ্চাদের নিয়ে শিশুপার্কে যাবো। এটাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এসে দেখি বন্ধ, জাদুঘরও বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখানে তো আসলে দেখার কিছু নেই, যা বাচ্চাদের আনন্দ দিতে পারে।
রমনা পার্কেও ছিল মানুষের ভিড়। কেউ ছবি তুলছেন কেউ তুলছেন সেলফি। এখানে বেড়াতে আসা নীলিমা আক্তার বলেন, শিশু পার্কটা বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের বেড়ানোর কোনো জায়গাই নেই। এমনিতেই ঢাকাতে বেড়ানোর জায়গার অভাব, তার ওপরে এটা দেখি বন্ধ।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ব্যবসার কারণে বাচ্চাদের সময় দিতে পারি না। বাচ্চারা খেলনা পছন্দ করে করোনার আগে কয়েকবার শিশুপার্কে নিয়ে এসেছি। ভীষন আনন্দ পেয়েছে। এবার এসে দেখি বন্ধ।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর শাহবাগে শিশুপার্কটির সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্বম্ভ নির্মাণ ( ৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্ব সাধারনের জন্য বন্ধ থাকবে। তখন থেকে এখনও বন্ধ আছে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে আসা অনেককেই শিশুপার্কের গেটে নেমে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে রাজধানীর শ্যমলীতে ছোট পরিসরে ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড (শিশু মেলা) থাকলেও শিশুদের তাতে মন ভরে না। এখানে রাইডের সংখ্যাও কম।আবার জাদুঘরে ঘুরে বেড়ানোরও সুযোগ নেই।
অন্যদিকে রাজধানীর গুলিস্তান পার্কে তুলনামূলক ভিড় ছিল বেশি। সেখানে ছোট ছোট দোকানিরা নানা ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে। এখানে ভ্রাম্যমাণ স্লিপারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই পরিবেশে শিশুরা ঘুরতে এসে অনেক মজা পেয়েছে। তাদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও সামিল হয়েছে ইদ আনন্দে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ