৭ মে’র সভা: কাউন্সিল প্রস্তুতি ও মাঠে থাকার কৌশল ঠিক করবে আ.লীগ
৩ মে ২০২২ ২৩:০৫
ঢাকা: ইদ উৎসব শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশল-কর্মসূচি গ্রহণ করে ঘরে-বাইরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭ মে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বসছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সকল সদস্যকে সভায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর ওই দিন বিকেল সাড়ে চারটায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে এ সভা থেকে।
দলীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সম্মেলন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে, না তার আগে হবে— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে সভা থেকে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। সভার আলোচ্যসূচিতে রয়েছে— শোক প্রস্তাব পাঠ, ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি জাতীয় নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস, ১১ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, সাংগঠনিক ও বিবিধ।
এদিকে, ২০২৩ সালের শেষে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করাসহ সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিতে পারেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দীর্ঘসময় করোনা মহামারির পর এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটির বৈঠক হতে যাচ্ছে। এর আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কমসংখ্যক নেতাকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি জানিয়েছেন, দলের জাতীয় কাউন্সিল আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ডিসেম্বরের ২০ তারিখে শেষ হবে। সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা ছিল। সেদিক বিবেচনা করে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল সহযোগী সংগঠনকে দ্রুত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ আসতে পারে সভা থেকে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই সভাটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দুই বছর করোনা ছিল দেশে। তাই সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া আমাদের আগস্ট মাসের কর্মসূচি গ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ব্যাপারেও আলোচনা হবে সভায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কাউন্সিলের তারিখ বলে দিয়েছেন। তিনি তো পার্টির মুখপাত্র। উনি বলে দিয়েছেন ডিসেম্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই আমরা উনার কথাকে নেত্রীর পক্ষ থেকে মনে করে নিতে পারি। এছাড়া মাননীয় নেত্রী অতি দ্রুত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। কাজেই এগুলো হচ্ছে সিম্পটম।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো তার সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের মেয়াদোত্তীর্ণ হতে দেয় না। কিন্তু এবার একটি জিনিস চিন্তায় রাখতে হবে যে, দুটি বছর করোনা থাকার কারণে কোনো কাজ করতে পারিনি। মানবিক কাজ ছাড়া রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করা যায়নি। কাজেই সেখানে তো একটু পিছিয়ে পড়া আছেই। সেই পিছিয়ে পড়া যে সংগঠনগুলোর কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এসব ব্যাপারেও সভায় আলোচনা হবে। মাননীয় নেত্রী আমাদের ৭ তারিখের সভায় হয়তো এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেবেন।’
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের চারটি পদ শূন্য রয়েছে। কার্যনির্বাহী বৈঠকে নতুন সদস্যের নাম ঘোষণা হতে পারে। এছাড়া আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। প্রতিবার এই সিটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে আসছে। সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোশন নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়ক টিমও গঠন করে দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। করোনাকালেও আমাদের নিয়মিত মিটিং হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধিগত কারণে সেখানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি। এবার তাই দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সকল সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, যেসব নির্ধারিত বিষয় আছে তার বাইরেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্বাচন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সে বিষয়ে এবং আগামী বছরের শেষের দিকে কিংবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচনের বিষয় রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।’
সভায় জাতীয় সম্মেলনের কোনো তারিখ নির্ধারণ হতে পারে কি না?— এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর। সেই হিসাবে আমাদের পরবর্তী কাউন্সিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হওয়ার কথা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে চলে। তাই আগামী কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেসব বিষয়েও সভায় আলোচনা হবে বলে আশা করছি।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
৭ মে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল গণভবন নির্ধারণ প্রস্তুতি মাঠে থাকার কৌশল সভা