৩ বছর পর চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘স্বস্তির’ ইদ
৪ মে ২০২২ ১৩:৪৪
ঢাকা: ইদ মানে স্বজনদের সঙ্গে কাটানো খুশির সময়। ইদ মানে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দিয়ে বেড়ানোর দিন। ইদ মানেই আনন্দের উচ্ছাস। তবে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু, ২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ইদের সময়টা কেটেছে অনেকটা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গ ছাড়াই। ইদ মানেই শুধু আনন্দ নয়, বরং সেবা দিয়ে যাওয়ারও দায়িত্ব- এই মূল্যবোধ থেকে হাসপাতালে রোগীদের সেবায় কেটেছিল তাদের ইদের দিন ও রাত। আবেগকে হার মানিয়ে দায়িত্ববোধকে ভালোবেসে ইদের আনন্দ রোগীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন তারা।
তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যাও কমেছে। এমন অবস্থায় প্রায় তিন বছর পর কিছুটা স্বস্তি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইদুল ফিতর উদযাপন করছেন দেশের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে দায়িত্ব ভুলে নয় বরং অতিরিক্ত দায়িত্ববোধ নিয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সতর্ক করার কাজও করে যাচ্ছেন যেন আবার হানা দিতে না পারে মহামারি। চাঁদ রাত এবং ইদের দিনও দেশের সকল সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২ মে) চাঁদ রাতে ও মঙ্গলবার (৩ মে) সারাদেশের মানুষ যখন ঈদ আনন্দে ব্যস্ত তখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। একের পর এক রোগী আসছে আর জরুরি বিভাগে তাদের সেবা দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দায়িত্বরতরা। নমুনা কম থাকায় ব্যস্ততা বেশি না থাকলেও ইদের দিন যথারীতি দায়িত্ব পালন করেছেন ল্যাবের চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্টরা।
সোমবার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া ৬১ বছর বয়সী বাবাকে নিয়ে আজিমপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে আসেন সাজ্জাদ আহমেদ রাসেল। রাতে খাওয়ার পরে বুকে ব্যাথা শুরু হওয়ায় এখানে নিয়ে আসেন বাবাকে। আসার পর টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের কাছে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে যান তিনি।
আহমেদ রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, আগামী কাল ইদ আর সেই আনন্দ কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল আব্বুর শরীর খারাপ হওয়াতে। কিন্তু এখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা স্বস্তি পেলাম চাঁদ রাতেও চিকিৎসাসেবা পেয়ে।
তার একটু পরেই ৫ বছরের কন্যাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী। সন্তান যা খাচ্ছে তাই বমি করছে এমন অভিযোগ নিয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তারা। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে আশ্বস্ত হয়ে বাসার ফিরে যান।
তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসা রোগীর সংখ্যাও। কেউ আসছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আবার কেউ বা দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, অ্যাম্বুলেন্স বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও অনেকেই এসেছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। এই সময়টুকুতে দম ফেলার সময় ছিল না চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। কর্তব্যরত আনসার বাহিনীর সদস্যরাও হিমশিম খাচ্ছিলেন রোগীদের সামলাতে।
জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. কিশোর সারাবাংলাকে বলেন, চাঁদরাতে মোটরবাইক দুর্ঘটনার অনেক রোগীই আসে। তবে সময় যতো বাড়তে থাকে ততো রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ থেকে কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় সবাইকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য। রোগীরাও জানে এখানে আসলে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যেতে হবে না। আর তাই সবাই এখানেই আসে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের হাসপাতাল থেকেও রোগীদের এখানে রেফার করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে তিন শিফটে কাজ করা হয়ে থাকে। চাঁদ রাত হোক বা ইদের দিন, এ রুটিন সবসময়েই ফলো করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের প্রধান একটি ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ইদুল ফিতর। আমরা চেষ্টা করি যতটুকু সম্ভব দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে কাজ করে যেতে। এরপরও অনেকেই আছেন যারা আসলে ইদের মাঝেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আর এজন্য তেমন একটা আফসোস নেই কারোরই। বরং গত দুই বছরের মহামারি বিবেচনায় দেশের পরিস্থিতি বর্তমানে ভালো আছে এটা ভেবে ভালো লাগে।
তিনি আরও বলেন, যদি কোনো জরুরি পরিস্থিতি দেখা দেয় তবে যাদের ডিউটি নেই এখন তাদেরও ডাকা হতে পারে। আমরা এমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই আসলে কাজ করে যাই। আর তাই ছুটি বা আনন্দ এসব বিষয়ে ভাবার খুব একটা বেশি সুযোগ থাকে না। সবসময় যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের একজন চিকিৎসক হিসেবে সেবা দিতে হবে এমনটা ভেবেই প্রস্তুত থাকি সবাই।
চাঁদ রাত শেষ হয়ে ইদের দিন মঙ্গলবার ইদের দিন শুরুটাতেও খুব একটা বেশি পালটায়নি জরুরি বিভাগের দৃশ্যপট। কিছুক্ষণ পরপরই অ্যাম্বুলেন্সে বা রিকশাযোগে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের আসতে দেখা যায় জরুরি বিভাগে। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি রোগী ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান চিকিৎসকরা।
এই সময়ে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করা ডা. অনুপম দত্ত বলেন, ইদের দিনও জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড় থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আসছে মানুষ। যদি রোগীর চাপ বাড়ে তবে যারা ছুটিতে আছেন তাদেরও ডাকা হতে পারে।
এসময় হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করা অন্যান্য চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাঁদ রাত বা ইদের দিন আনন্দের হলেও এভাবে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করায় তাদের খুব বেশি আক্ষেপ নেই। কারণ মানুষের প্রয়োজনে তারা সবাইকে সেবা দিয়ে যেতে পারছেন এটাই তাদের বড় আনন্দ। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আনন্দের সময় কাটানোটা উপভোগ করতে না পারলেও পেশাগত দায়িত্ব থেকে সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে যেতে।
জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, যেহেতু আমাদের দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার কিছুটা কম, তাই গত দুই বছরের তুলনায় স্বস্তিতে ইদ পালন করার পরিস্থিতি আছে বলা যায়। তবে সেজন্য এখানে দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা আবেগকে সীমিত করে দায়িত্ববোধ নিয়েই মানুষের জন্য কাজ করে যাই।
তিনি বলেন, সবাই ইদ করে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে। এটা হলো মানসিক একটা প্রশস্তির বিষয়। এর পাশাপাশি দায়িত্বেরও একটা বিষয় আছে। দায়িত্ব পালনে একটা আলাদা শান্তি আছে আবার এক ধরনের চাপও আছে। হাসপাতাল হলো এমন একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে মানুষ আসবে চিকিৎসা সেবা নিতে। তাই এখানে সেই দায়িত্ব পালনে পিছপা হওয়া যাবে না চিকিৎসকদের।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক হিসেবে এমনিতেই আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থাকে একটা। আর তাই পরিবারের সঙ্গে আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থাকলেও কিছুটা ইনভলবমেন্ট কম থাকে। দেখা গেলো আমরা পরিবারের প্রয়োজনীয় সবকিছু যোগাড় করে দিয়ে আনন্দের সময়েও হাসপাতালে চলে আসছি দায়িত্ব পালনের জন্য।
ডা. আলাউদ্দিন বলেন, দিন শেষে বাস্তবতা হলো আমরা চিকিৎসকরাও মানুষ। আমাদের পরিবার ও স্বজনরাও চায় আমাদের সঙ্গে ইদ করতে। আমরাও চাই বাবা-মায়ের সঙ্গে ইদ করতে, সন্তানদের সঙ্গে ইদের আনন্দ ভাগ করে নিতে। কারণ আমাদের দেশে ইদ এমন একটা উৎসব, যেখানে জড়িত থাকে আবেগও।
তিনি বলেন, দেখা যায় একটা পরিবারের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় থাকে। কিন্তু ইদে সবাই এক জায়গায় একত্রিত হয়। পারবারিক একটা মিলনমেলা হয়, যেখান থেকে আমরা আসলে প্রায়সময়ই বঞ্চিত হই। এটাকে আমরা অনেক সময় দুর্ভাগ্য হিসেবেই মনে করি। কারণ দায়িত্বের কাছে আসলে আবেগকে হার মানাতেই হয়।
এর আগে সোমবার রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল বলে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) জরুরি বিভাগের চিকিৎসার জন্য আসেন জাভেদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকা ছেলের চিকিৎসায় ব্যস্ত তখন চিকিৎসকরা।
জাভেদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, চাঁদ রাতে সবাই যে যার মতো করে বাসায় টিভি দেখছিল আর বাচ্চার মা রান্নাঘরে কাজ করছিল। অসতর্কতার কারণে স্কেলের পাশে থাকা ধারালো ব্লেডে ছেলের হাত কেটে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল আর তাই হঠাৎ ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে হলো। বিপদ তো আর বলে আসে না। কিন্তু তাও ভাগ্য ভালো এখানে চিকিৎসাটা পাচ্ছি।
প্রায় একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও। এখানেও রোগীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা।
এসব হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসকরা জানান, তিন বছর পরিবারের সঙ্গে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পারার একটা ক্ষীণ আক্ষেপ থাকলেও এবার তেমনটা নেই। কারণ ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার এখন কম। তবে একজন চিকিৎসক হিসেবে আসলে সবসময় প্রস্তুতি রাখতে হয় রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা ভেবে। এক্ষেত্রে ইদের ছুটি নেই বা ঘুরতে যেতে পারছি না সেগুলো নিয়ে তেমন আক্ষেপ করেও লাভ নেই।
শুধুমাত্র জরুরি বিভাগেই নয়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীদের সেবা দেওয়াতেও ব্যস্ত চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা।
এসব হাসপাতালের নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারাও প্রায় একই রকমের কথাই বলেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পারার বেদনা আছে কিছুটা। কিন্তু রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে পারাটাও কম আনন্দের না বলেই জানান তারা।
প্রায় একই অবস্থা রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা পিসিআর ল্যাবগুলোতেও। নমুনা কম থাকায় কাজ কম, কিন্তু তাতেও ল্যাবগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন ভাইরোলজিস্ট ও টেকনোলজিস্টরা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার এখন কম দেখা যাচ্ছে। বিগত তিন বছরে ইদের দিন সবাই ছুটি কাটালেও আসলে আমাদের তেমন কোনো সুযোগ হয়নি। এর মাঝে ২০১৯ সাল তো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিল। ২০২০ ও ২০২১ সালে সবাই ব্যস্ত কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে। এর মাঝে অন্যান্য রোগীরা তো আছেই। তবে এবার সংক্রমণ শনাক্তের হার কম থাকার কারণে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে আমাদের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা আছে। যেকোনো জরুরি সময় বা প্রয়োজনে কাজ শুরু করতে পারবো আমরা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে জরুরি বিভাগ খোলা আছে। সেখানে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন। ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য উন্নত মানের খাবারও পরিবেশন করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা চলছে। আর আন্তঃবিভাগে থাকা রোগীদের চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। যে কোনো পরিস্থিতিতে এখানে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কিন্তু মোটিভেটেড। আমরাও তাদের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাই।
তিনি বলেন, আসলে রোগীদের সেবা দিয়ে যেতে হবে শুধুমাত্র এই ভাবনা নিয়েই আমাদের এখানে সবাই কাজ করে। চাঁদ রাত হোক বা ইদের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও প্রস্তুত থাকে। আমরা ইদের দিন তাও তাদের জন্য কিছু ভালো খাওয়ার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করে থাকি। রোগীদেরও ভালো খাওয়া পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার ৬০০ জনের বেশি জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মাঝে বিভিন্ন পুলিশ কেইস-যেমন মারামারি ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আসা রোগীর সংখ্যা কিন্তু অনেক বেশি। এর মাঝে ১৫০ জনের বেশি রোগীকে ভর্তিও করা হয়েছে। দেশে যদি হঠাৎ কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন, তার জন্যেও আমাদের র্যাপিড রেসপন্স টিম প্রস্তুত থাকে। যদি প্রয়োজন হয় তবে ৩০ মিনিটের মাঝেই তারা এসে কাজ করতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, রোগীদের সেবা দেওয়া চিকিৎসকের দায়িত্ব। কিন্তু কোনো চিকিৎসকই চাইবে না রোগীর সংখ্যা দেশে বাড়ুক। আর চাঁদ রাত এবং ইদের সময় কেউ অসুস্থ হোক এমনটাও কেউ চাইবে না। কিন্তু তারপরেও রোগীরা জরুরি বিভাগে আসে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। আমাদের সকল প্রতিষ্ঠানের জরুরি বিভাগে সেই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়।
তিনি বলেন, চাঁদ রাত এবং ইদের দিনে জরুরি বিভাগে রোগীর অনেক চাপ থাকে। কারণ এদিন মানুষ অনেকটা লাগামহীন ভাবেই ঘুরে বাইরে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণরা বাইকে করে ঘুরে আর বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকদের পেশার সঙ্গে কিন্তু মানবিক ও মানবতা দুইটা দিকই জড়িত। তাই হাসপাতালে যখন রোগী আসে তখন পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়ার চাইতে বেশি জরুরি হয়ে পড়ে মানবতার সেবা করা।
তিনি আরও বলেন, গত দুই তিন বছর ধরে ইদের সময়টাতে বিভিন্ন কারণে চিকিৎসকদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে। এক বছর গেল ডেঙ্গুর কারণে, আর এর পরের দুই বছর কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্যরা অন্যদের মত ইদ আনন্দ করতে পারেননি সেটা বলা যায়। তবে এবার সংক্রমণ শনাক্তের হার কম থাকার কারণে কিছুটা স্বস্তি আছে সবার মাঝে। তাও আমাদের প্রত্যাশা, কোনো একসময় পৃথিবী পুরোপুরি মহামারিমুক্ত হয়ে উঠবে। দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে সবকিছু, আর তখন ভালোভাবে সবাই ইদের আনন্দ করতে পারবে।
মঙ্গলবার সকালে ইদের ছুটির মধ্যে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম দেখতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, এবার ইদের ছুটিতে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়াও হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী হাসপাতালে রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ