আধুনিক হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা, জুনে আসছে মহাপরিকল্পনা
৫ মে ২০২২ ২৩:২৩
ঢাকা: বাঘ কিংবা সিংহ কেউ থাকবে না খাঁচায় বন্দি। বক, ময়ুররাও ঘুড়ে বেড়াবে মনের সুখে। প্রাণীদের বিচরণক্ষেত্র হবে এমন মুক্ত পরিবেশে, আর মানুষ তাদের দেখবে নিরাপদ দূরত্বে থেকে। বিশ্বের উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের চিড়িয়াখানাকে এমন আধুনিক করার চিন্তা করছে সরকার। সেজন্য একটি মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে। যা আগামী মাসেই হাতে পাবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এরপরই শুরু হবে কাজ।
রাজধানীর মিরপুরে ১৮৬ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা। যদিও এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা থেকে। আদতে সেই ধারণা নিয়ে এখনও চলছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। খাঁচাবন্দি করে জীবজন্তুকে মানুষের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই মান্ধাতা আমলের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেক আগেই। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতে চিড়িয়াখানা শুধু প্রদর্শনের স্থান নয়, প্রাণীদের মুক্তভাবে বিচরণক্ষেত্রের পরিবেশও দেওয়া হয়েছে। এবার এই ধারণা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশও। ওইসব দেশের আদলে একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন থিম হবে প্রাণীগুলো মনে করবে যেন একটা ফ্রি জোনে রয়েছি আমরা। অন্যদিক থেকে মানুষও থাকবে ফ্রি জোনে।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন যে চিড়িয়াখানা হবে তা পাঁচটি জোনে বিভক্ত থাকবে। বাংলাদেশে যেসকল প্রাণী পাওয়া যায় তাদের নিয়ে থাকবে ‘বাংলাদেশ হ্যাবিটেট জোন’, আফ্রিকার প্রাণীদের নিয়ে থাকবে ‘আফ্রিকান হ্যাবিটেড জোন’, গৃহপালিত প্রাণীদের জন্য থাকবে একটি জোন, নিশাচর প্রাণীদের জন্য থাকবে নাইট সাফারি জোন, আর শিশুদের খেলাধুলার জন্য থাকবে অ্যাকটিভ জোন নামে আরেকটি জোন। নাইট সাফারি জোন খোলা থাকবে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত। চিড়িয়ানার পেছনে বৈদ্যুতিক পরিবেষ্টনী থাকবে লতাপাতায় ঢাকা। যা চোখে দেখা যাবে না। এই প্রাকৃতিক প্রাচীর পেরিয়ে দর্শনার্থীরা প্রাণীর সংস্পর্শে আসতে পারবে না। প্রাণীদের জোনগুলোতে তাদের খাওয়ার উপযোগী গাছ লাগানো হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন সীমানা করা হবে পাইলিং পদ্ধতিতে। এর সুবিধা হলো বাইরের কোনো পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো লাইন চিড়িয়াখানায় ঢুকতে পারবে না। সীমানা প্রাচীরের পাশ দিয়ে হাঁটার পথ থাকবে। প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা। পানি পরিশোধনের জন্য থাকবে অত্যাধুনিক মেশিন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা লোক থাকবে। যেন দ্রুতই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা যায়। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী চিড়িয়াখানার চারপাশে দুইটি লেক বা জলাধার থাকবে। যেখানে থাকবে ভাসমান রেস্তোরা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়ালিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে চিড়িয়াখানার নকশা করা প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের জন্য মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নকশার দুইটি চিড়িয়াখানা হবে বাংলাদেশে। একটি ঢাকায় আরেকটি রংপুরে। আগামী মাসে ( জুন) মহাপরিকল্পনা হাতে পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, হাতে পাওয়ার পরই মাস্টারপ্ল্যান সরকারের কাছে উপস্থাপন করে প্রকল্প সাবমিট করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে কাজ শুরু করতে করতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। যখন কাজ শুরু হবে তখন অল্প অল্প করে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। কারণ চিড়িয়াখানা একেবারে বন্ধ করে দিয়ে কাজ করা যাবে না।
বর্তমান চিড়িয়াখানাটি রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর বাংলাদেশের জন্মের পর ১৯৭৪ সালে রাজধানীর মিরপুরে চিড়িয়াখানাটি স্থানান্তর করা হয়। নাম দেওয়া হয় ঢাকা চিড়িয়াখানা। ওই বছরেরই ২৩ জুন সর্বসাধারণের জন্য এই চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়। মোট ১৮৬ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা। এখানে কয়েকশ প্রজাতির পশুপাখির পাশাপাশি রয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল। আরও আছে একটি প্রাণী জাদুঘর। চিড়িয়াখানাটি ঘিরে রয়েছে একটি লেক। ছায়া শীতল, অসংখ্য ফুল ও ফলের গাছ ঘেরা মনোরম পরিবেশে জাতীয় চিড়িয়াখানা ছোট বড় সকলের কাছেই ঘুড়ে বেড়ানোর জন্য পছন্দের একটি জায়গা। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি বাদে সবদিনই খোলা থাকে, প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর চিড়িয়াখানার ভেতরে জাদুঘর ঘুরে দেখতে চাইলে দিতে হবে আরও দশ টাকা। রাজধানীর যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, সিএনজি বা অন্য যেকোনো রাইডে চেপে যাওয়া যাবে মিরপুর এক ও দুই নম্বরের মাঝামাঝি অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায়। তথ্য মতে, বছরে ত্রিশ লাখ দর্শনার্থী এই চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসেন।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ