Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চুল ছোট করে কক্সবাজারে চাকরির চেষ্টায় ছিল বাপ্পি-সজীব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ মে ২০২২ ১৬:৩৫

ঢাকা: রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ এবং দু’জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত মাহমুদুল হাসান সিয়াম এবং সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব ও মেহেদী হাসান বাপ্পিসহ তিন জনকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) শরীয়তপুর ও কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে।

র‌্যাবের দাবি, বাপ্পি ও সজীব চুল ছোট করে কক্সবাজারে আত্মগোপন করেন। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি নেওয়ার চেষ্টা করছিল। আর সিয়াম শরীয়তপুরে দুর্গম এলাকায় আত্মগোপন করেছিল।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুর ১২টার দিকে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

আরও পড়ুন- নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, বাপ্পিসহ গ্রেফতার ৩

তিনি বলেন, গত ১৮ এপ্রিল রাত থেকে ১৯ এপ্রিল ভোর পর্যন্ত নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। সেহেরির সময় সংঘর্ষ কিছুটা থামলেও সকালে সাড়ে ৯টার দিকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। প্রায় ১৮ ঘণ্টা চলমান এই সংঘর্ষে দুই জন নিহত এবং গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সংঘর্ষে লিপ্ত উভয়পক্ষের প্রায় দুই শতাধিক আহত হন।

র‌্যাবের কমান্ডার বলেন, ওই সময় রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুইটি হত্যা মামলা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়াসহ গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়।

জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল মূলত নিউমার্কেটে পাশাপাশি দুইটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতারি বিক্রির টেবিল বসানো নিয়ে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে দোকানের কর্মচারী সজীব ও বাপ্পি ফোন করে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আসতে বলেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে পৌঁছালে ফের ওই দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে মারামারি হয়।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ওই মারামারিকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। এতে নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্র ও ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

র‌্যাবের দাবি, ওই ঘটনাটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিবিধ তথ্য ও কনটেন্ট ছড়িয়ে ইন্ধন দেওয়ার ফলে উত্তেজনা চরম সহিংসতায় রূপ নেয়। সংঘর্ষে নাহিদ (১৮) নামের একজন কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী ও মোরসালিন (২৬) গুরুতর আহত হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করে। যে কারণে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৩-এর যৌথ অভিযানে শরীয়তপুর ও কক্সবাজার থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব (২৩), মেহেদী হাসান বাপ্পি (২১) এবং কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী মো. মাহমুদুল হাসান সিয়ামকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় স্বীকার করেছেন।

গ্রেফতার বাপ্পি ও সজীব নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডে কর্মচারী ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা র‌্যাবকে জানান, রাজধানীর নিউমার্কেটের ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড ও ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারীদের মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল ইফতার বিক্রির টেবিল বসানো নিয়ে বাগবিতণ্ডার সূত্রপাত হয়। পরবর্তী সময়ে তারা পরিচিত কিছু দুষ্কৃতিকারীকে মোবাইল ফোন দিয়ে ডেকে আনে। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ১০/১৫ জন দুষ্কৃতিকারী এসে ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড দোকান কর্মচারীদের মারধর করেন। এসময় অন্যান্য দোকানের কর্মচারীরা আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা চালান। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে ব্যাপক আকারে সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর বাপ্পী ও সজীব নিজেদের পরিচয় লুকানোর জন্য লম্বা চুল কেটে ছোট করেন। তারা কক্সবাজারে আত্মগোপন করে সেখানকার আবাসিক হোটেলে চাকরির চেষ্টা চালান।

ওই সময়কার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রেফতার মো. মাহমুদুল হাসান সিয়াম সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নাহিদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় নাহিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদ মারা যান। ঘটনার পর গ্রেফতার সিয়াম গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, সিয়াম একটি রড দিয়ে পিটিয়ে নাহিদকে ফেলে দেন। সিয়াম সেখান থেকে সরে যাওয়ার পর ইমন ছুরি দিয়ে কুপিয়েছে বলে সিসিটিভিতে দেখা গেছে। ইমনকে আমরা খুঁজছি, পুলিশও খুঁজছে। ইমন কোথাও আত্মগোপন করে আছে হয়তো।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতারদের এখন পর্যন্ত কারও রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যারা আঘাত করেছে তাদের শনাক্তের কাজ চলছে। অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা বহিরাগত ছিল সেখানে। তারাই মূলত গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আঘাত করেছে। তাদের গ্রেফতারে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

গ্রেফতার তিন টপ নিউজ ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর