Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিপুল আমদানির পরও বাজারে দেখা নেই ভোজ্যতেলের

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ মে ২০২২ ১৮:৪২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারিভাবে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর নির্ধারণের পরও বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কাটছে না। পাইকারি ও খুচরা বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল মিলছে না। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও মিল মালিকরা তেল সরবরাহ করছে না। আর মিল মালিকরা জানিয়েছেন, সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই/তিন দিন সময় লাগবে। সেই হিসাবে মঙ্গলবারের (১০ মে) আগে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহে অবনতির প্রেক্ষাপটে দেশের বাজারেও ভোজ্যতেল নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) ইদুল ফিতরের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে বোতলের তেল লিটারে ৩৮ টাকা আর খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানোর কথা জানানো হয়। বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকের পর এই বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বলা হয়, শুক্রবার থেকে নতুন এই দর কার্যকর হবে।

নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ক্রেতারা প্রতিলিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকায় কিনতে পারবেন। আর সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটার বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকা। একইসঙ্গে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হবে ১৭২ টাকায়।

নতুন দর নির্ধারণের দুইদিন পরও শনিবার (৭ মে) সপ্তাহের প্রথমদিনে চট্টগ্রামের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অব্যাহত ছিল তেলের সংকট। খুচরা ব্যবসায়ীরা এক সপ্তাহ আগে অর্ডার দিলেও শনিবার পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল খাতুনগঞ্জ থেকে নিয়ে যেতে পারেননি।

নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ে মুক্তা এন্টারপ্রাইজে ইদুল ফিতরের দুইদিন আগে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অর্ডার দিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা পুতুল দাশ। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি পাঁচ লিটার তেলের বোতল পাননি। মুক্তা এন্টারপ্রাইজের মালিক অসীম দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো তেলের বোতল সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে। খাতুনগঞ্জে গিয়েও তেল পাচ্ছি না। কেউ পাঁচ লিটারের জন্য এলে এক লিটার দিচ্ছি। কেউ এক লিটারের বোতল বিক্রি করছে, আবার কেউ করছে না।’

তবে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। তেলের সরবরাহ সংকটের বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অজুহাত, মিল মালিকরা তেল দিচ্ছেন না। পাইকারিতে তেল সরবরাহ প্রায় বন্ধ থাকলেও এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী প্রবীর সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিল থেকে আমরা যে পরিমাণ তেল পাচ্ছি, সেই পরিমাণ তেল বিক্রি করছি। আমাদের কাছে না থাকলে আমরা কোত্থেকে দেবো? এসব বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারব না। নিষেধ আছে।’

খাতুনগঞ্জের আরেক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী দ্বীন সিন্ডিকেটের মালিক জামাল উদ্দিনও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। খাতুনগঞ্জের আর এন ট্রেডার্সের মালিক আলমগীর পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশে দৈনিক ছয় থেকে সাত হাজার মেট্রিকটন সয়াবিন তেলের চাহিদা আছে। সপ্তাহখানেক ধরে সেই পরিমাণ তেল বাজারে আসেনি, সরবরাহও হয়নি। এর মধ্যে ইদের বন্ধও গেছে। তবে আজ (শনিবার) তেল নিয়ে মিল থেকে ট্রাক খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে। সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। আশা করি, মঙ্গলবারের দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

ভোজ্যতেল আমদানিকারক সিটি গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইদুল ফিতরের বন্ধ গেছে। ব্যাংক বন্ধ ছিল। পরিবহন বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকভাবে একটা চাপ গেছে। এখন সবকিছু আবার খুলেছে। প্রয়োজনীয় সময়টুকু তো আমাদের দিতে হবে।’

এদিকে গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ছয় কোটি লিটার অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে পাঁচটি জাহাজ এসেছে। সিটি গ্রুপ, সেনা কল্যাণ এডিবল অয়েল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপ এসব তেল আমদানি করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানান, গত ২৯ এপ্রিল ২১ হাজার মেট্রিকটন তেল নিয়ে আর্জেন্টিনা থেকে ওরিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ, ২ মে একই দেশ থেকে সাত হাজার মেট্রিকটন তেল নিয়ে এন এস স্টিলা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে।

তিনি আরও জানান, বাকি তিনটি জাহাজ এসেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। ইদুল ফিতরের পরদিন ৪ মে ৭ হাজার ৭৯৯ মেট্রিকন তেল নিয়ে মেঘনা প্রাইড, একইদিন ১১ হাজার ২৪৫ মেট্রিকটন তেল নিয়ে এমটি সানজিন এবং সর্বশেষ শুক্রবার (৬ মে) ১২ হাজার মেট্রিকটন তেল নিয়ে এমটি সুমাত্রা পাম চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে।

সিটি গ্রুপের বিশ্বজিৎ সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমদানিতে সংকট নেই। তেলের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে। এরপর বাজারে তেলের আর কোনো সংকট থাকবে না।’ তবে বাজারে চলমান যে সংকট, সেটা আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছে বলে মনে করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদিনে চার কোটি লিটারের মতো তেল বন্দরে এসেছে। এর আগে এসেছে প্রায় দুই কোটি লিটার। তাহলে দেশে তো সয়াবিন তেলের মজুদ সংকট নেই। আমাদের সংগ্রহ করা তথ্যানুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশে যে পরিমাণ তেল মজুদ আছে তা দিয়ে আরও দুই মাস চলবে।’

তাহলে বাজারে সংকট কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে- বাড়তি দামে আমদানির কথা বলে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামটা জায়েজ করে নেওয়া। একবার সংকট তৈরি করে এক লাফে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়াতে পেরেছে। এরপর আরও সুবিধা পাওয়া যায় কি না সেটাই দেখছে সিন্ডিকেট। আমাদের ধারণা, তারা আমদানিতে ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা নিতে চাচ্ছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

খাতুনগঞ্জ বিপুল আমদানি ভোজ্যতেল সংকট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর