লঞ্চঘাটে উপচে পড়া ভিড়, ঢাকায় ফিরে ভোগান্তি চরমে
৭ মে ২০২২ ১৯:৪০
ঢাকা: ইদুল ফিতরের ছুটি শেষে গত কয়েক দিন ধরেই লঞ্চে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। তবে শনিবার (৭ মে) লঞ্চে ঢাকায় ফিরেছেন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ। এদিন সদরঘাটে ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সদরঘাট এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
শনিবার (৭ মে) ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এই চিত্র দেখা যায়। এমনকি ঘাট থেকে বের হয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কোনো ধরণের যানবাহন না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ বিপুল সংখ্যক যাত্রী লঞ্চে ঢাকায় ফিরেছে। যে কারণে এলাকায় পা রাখার জায়গাও ছিল না। এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, লেগুনা, বাস সবই বেশি ভাড়া আদায় করেছে। এমনকি বেশি ভাড়া দিয়েও কোনো যানবাহন মেলেনি। এটি হয়েছে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার অভাবে। প্রশাসন যদি আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতো তাহলে হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’
ভোর ৬টার দিকে সুন্দরবন-১০ বরগুনা থেকে এসেছে। তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি। সদরঘাট থেকে বের হয়ে যানবাহনের জন্য পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আফতাব উদ্দিন। কেউ কথা শুনছে না। এরইমধ্যে আরও বেশ কয়েকটি লঞ্চ সদরঘাটে থামলে যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। দেখা দেয় গাড়ির অভাব। বাড্ডা যেতে সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৭০০ টাকা। অথচ স্বাভাবিক দিনে এই ভাড়া লাগত ৩০০ টাকা। ঘাট থেকে রিকশা নিয়ে বাহাদুরশাহ পার্কে যাবেন সেখানেও ভাড়া চাচ্ছে ১০০ টাকা। অথচ এই ভাড়া লাগত ২০ থেকে ৩০ টাকা। এভাবে যাত্রী ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছে।
আরেক যাত্রী জীবন রহমান বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় আছি, কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। এত মানুষ আজই আসতে হলো! কিভাবে যাবো মিরপুর বুঝতে পারছি না।’
আরাফাত রহমান বরিশাল থেকে এসেছেন। তিনিও পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এত লোক গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ কোনো গাড়ি নেই। রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে বাধ্য হয়ে ব্যাগ-বস্তা মাথায় নিয়ে হাঁটা শুরু করেছেন। তিনি ভাটারা যাবেন। হেঁটে কতদূর যেতে পারবেন এই ভেবে দাঁড়িয়ে আছেন। মানুষের স্রোতে দাঁড়িয়ে থাকাও মুশকিল হয়ে পড়েছে।
সদরঘাট টার্মিনালের সামনে ফল বিক্রেতা আদনান হোসেন বলেন, ‘এবার ইদে এই প্রথম এত যাত্রী চোখে পড়ল। দাঁড়ানোর জায়গা নেই। গাড়ি নেই। শুধু যাত্রী আর যাত্রী। আগামীকাল থেকে অফিস শুরু এ কারণে আজ সবচেয়ে বেশি মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন।’
বিআইডব্লিউটিসির উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম শনিবার (৭ মে) যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে। কারণ এদিন ছুটি শেষ, অন্যদিকে এদিনের টিকিট আগেই শেষ হয়েছিল। আগামীকালও যাত্রীচাপ থাকবে। এরপর স্বাভাবিক গতিতে যাত্রী আসবে। আমরা চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব লঞ্চঘাট খালি করা যায়। পল্টুন খালি করা না হলে নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য আমরা চেষ্টা করেছি পল্টুন সবসময় ফাঁকা করা। ট্রাফিক পুলিশও বাইরের সড়কে দায়িত্ব পালন করেছে। ১১টার দিকে সবকিছু ফাঁকা হলেও সকাল থেকে যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এটা আমাদের কোনো বিষয় নয়। যানবাহনের অভাবে এরকম দুর্ভোগ হয়েছে।’
নৌ পুলিশের সদরঘাট শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীর চাপ অনেক বেশি ছিল। আজ অন্তত লাখ খানেক যাত্রী এসেছে। যাত্রী হয়রানি হয়েছে এমন অভিযোগ পাইনি। চেষ্টা করা হয়েছে কেউ যেন বিপদে না পড়েন। ছিনতাই, টানা পার্টি এসব রোধে কাজ করা হয়েছে। টার্মিনালের ভেতরে যাতে কেউ ভোগান্তিতে না পড়েন সেজন্য কাজ করা হয়েছে। তবে যানবাহনের ঘাটতি থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেছেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও