পাবজি আসক্ত কিশোর, বকা দেওয়ায় ৫ মাস আত্মগোপনে
৭ মে ২০২২ ১৯:৪৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মোবাইল গেম খেলতে নিষেধ করায় পাঁচ মাস ধরে আত্মগোপনে ছিলেন দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোর। বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টে চাকরিও নিয়েছিল ওই কিশোর। ফেসবুকে বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে র্যাব সদস্যরা অবস্থান শনাক্ত করে তাকে উদ্ধার করে অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। র্যাব জানিয়েছে, ইন্টারনেটে ফ্রি ফায়ার, পাবজিসহ বিভিন্ন গেম ও নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফিতে অস্বাভাবিক আসক্ত হয়ে পড়েছিল ওই কিশোর।
শুক্রবার (৬ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার মোড় থেকে তাকে উদ্ধার করেন র্যাব সদস্যরা। ১৫ বছর বয়সী কিশোরের বাসা নগরীর চকবাজার থানার ডিসি রোডে। স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সে।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ সারাবাংলাকে জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দুপুরে বাসায় বসে মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলছিল ওই কিশোর। তার বাবা-মা দেখতে পেয়ে তাকে শাসন করেন। তার বাবা ‘পড়ালেখা না করলে নিজে রোজগার করে খাও’ বলে মন্তব্য করেন। এতে অভিমান করে বাসায় মোবাইল রেখে স্বাধীন জীবনযাপনের ইচ্ছায় ওই কিশোর দুপুরেই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। রাতেও বাসায় না ফেরায় পরদিন তার মা চকবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
গত ২৬ মার্চ তার মা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় তার ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত তিন জন ওই কিশোরের বন্ধু। তার বাবা-মা র্যাবের কাছে ছেলেকে উদ্ধারের আবেদনও করেন। র্যাব তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কিশোরের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে উদ্ধার করে।
এম এ ইউসুফ বলেন, ‘উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর জানিয়েছে, বাসা থেকে বেরিয়ে সে নগরীর অলঙ্কার মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয়। সেখানে এক মাস ২২ দিন করে। এরপর চান্দগাঁও থানার মোড়ে এসে আরেকটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয় গত ১ ফেব্রুয়ারি। ১৫ দিন পর একজন কর্মচারীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর একই এলাকায় নিউ চান্দগাঁও রেস্ট হাউজ নামে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি নেয়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।’
আত্মগোপনে থাকার সময় নিজের নাম পাল্টে ফেসবুকের আইডি খোলার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘কর্মস্থলেও সে আসল নাম-পরিচয় গোপন করে। ভিন্ন নামের ফেসবুক আইডি থেকে আত্মীয়স্বজনের আইডিতে গিয়ে কমেন্ট করত। কয়েকটি কমেন্ট দেখে সন্দেহ হলে ফেসবুকে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো হয়। এভাবেই তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি গেমের পাশাপাশি তারা চার বন্ধু ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির কয়েকটি গ্রুপে যুক্ত ছিল। তিন বন্ধুর মধ্যে দু’জন দেশে থাকে। একজন পোল্যান্ডে ও একজন কাতারে থাকে। কিশোর নিজেই নামে-বেনামে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট অপারেট করত।’
এদিকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে নগরীতে র্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে আনার পর সন্তানের দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম