সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ, র্যাবের হাতে গ্রেফতার ২
৯ মে ২০২২ ১৮:৪১
মানিকগঞ্জ: গ্রাহকদের বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কাকনা বাজারে শিখা বাচিব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সমিতির বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
রোববার (৮ মে) মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কাকনা বাজার এলাকায় শিখা বাচিব বহুমুখী সমবায় সমিতির কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। সিপিসি-৩ টিমের অভিযানে সমিতির সভাপতি আ. রাজ্জাক ওরফে লিয়াকত (৫১) ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতোয়ার রহমানকে (৫৩) গ্রেফতার করা হয়। এসময় সমিতির কার্যালয় থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক সঞ্চয় ও ঋণ আদায় শিট এবং সদস্য ভর্তি ফরমসহ বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র জব্দ করা হয়।
সোমবার (৯ মে) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৪-এর মানিকগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার (সিও) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরিফ হোসেন। তিনি জানান, শিখা বাচিব বহুমুখী সমবায় সমিতি নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ জনগণকে ১২ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ১২ বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। র্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সমিতি ২০ জন সদস্যের কথা উল্লেখ করলেও তাদের সদস্য সংখ্যা ৪০০ থেকে ৪৫০ জন। আবার কোটি কোটি টাকা আদায় করলেও ওই সমিতির কোনো রক্ষিত জামানত নেই।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব সিও বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মী বা সদস্যদের মাধ্যমে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকার কৃষক, দরিদ্র ব্যক্তি, মনোহারি ও ফুটপাতের দোকানদার, গৃহকর্মী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করত এই সমিতি। ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে তাদের সমিতিতে বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে উদ্বুদ্ধ করত। ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নানা কৌশলে ভুলিয়ে তাদের অফিসে গিয়ে সদস্য বানিয়ে ফেলত।
র্যাব জানিয়েছে, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘ দিন ধরেই অল্প সময়ে ঋণ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে সমিতিতে সঞ্চয়, বিনিয়োগ বা ডিপিএস করতে আগ্রহী করে আসছিল। তাদের বলা হতো, ১০ থেকে ১৫ দিন নিয়মিত নির্দিষ্ট হারে সঞ্চয় দিলেই তাদের ঋণ দেওয়া হবে। কিন্তু তারা হাতেগোনা দুয়েকজনকে ঋণ দিলেও বাকি কাউকেই সঞ্চয়ের বিপরীতে ঋণ দিত না। ঠিকমতো সঞ্চয় না দিলে তাদের ঋণ দেওয়া হবে না, মূল আমানত ও লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হবেন— এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের নিয়মিত সঞ্চয় দিতেও বাধ্য করা হতো।
র্যাব আরও জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত শিখা বাচিব বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আ. রাজ্জাক ওরফে লিয়াকত এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আতোয়ার রহমান পেশাদার প্রতারক। তারা অল্প শিক্ষিত ব্যক্তি। কিন্তু তাদের প্রকৃত পরিচয় আড়াল করে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার নাম করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন। সাড়ে তিনশ থেকে চারশ জন সদস্যের এই সমিতির মাধ্যমে তারা গত ১২ বছরে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
র্যাব সিও আরিফ হোসেন বলেন, প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির পেশাদার প্রতারক চক্র। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), ই-কমার্স, সমবায় সমিতি, এনজিও, অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করার বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছে র্যাব। এরই মধ্যে ফাল্গুনী ডটকম ও কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মতো কয়েকটি প্রতারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ সফল অভিযান চালিয়েছে। ভবিষ্যতেও র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সারাবাংলা/টিআর
র্যাব-৪ শিখা বাচিব বহুমুখী সমবায় সমিতি সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা