গুলি করে কারাগারে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান
১০ মে ২০২২ ০০:২০
কুমিল্লা: ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মীকে গুলি করে আহত করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ও বিএনপি সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রেদোয়ানসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (৯ মে) রাত সাড়ে ৮টায় কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৭-এর বিচারক আবু বকর সিদ্দিক এই চার জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় চান্দিনা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আখলাকুর রহমানের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিন দুপুরে কুমিল্লার চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজে ছাত্রলীগ ও এলডিপি’র দুই দলেরই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন জড়ো হতে থাকলে উত্তেজনা ছড়ায়। আড়াইটার দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি করে সেখানে গেলে এক পর্যায়ে গুলি করে বসেন। গুলিতে এক ছাত্রলীগ ও এক স্বেচ্ছাসেবক লীগকর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় চান্দিনা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আখলাকুর রহমান জুয়েল বাদী হয়ে সোমবার বিকেলে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে পুলিশ এ ঘটনায় আটক চার জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করেন।
যে চার জনকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে তারা হলেন— এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ (৬৯), চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের রবিউল্লাহর ছেলে আলী (৩৭), হারং গ্রামের আব্দুল মবিনের ছেলে বাকি বিল্লাহ (৩৯) ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া খামারখাতা গ্রামের রেজাউল করিম (৫৫)।
রেদোয়ান আহমেদ জাতীয় পার্টির হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও তিনি একবার জাতীয় নির্বাচনে জয় পান। পরে যোগ দেন বিএনপিতে। বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে তিনি যোগ দেন এলডিপি’তে। অন্যদিকে রেদোয়ানেরই গাড়িচালক গ্রেফতার আরেক ব্যক্তি রেজাউল করিম।
এদিকে, রেদোয়ানের গুলিতে আহত হয়েছেন চান্দিনা পৌরসভার রূপনগর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী মাহমুদুল হাসান সরকার জনি (২২) এবং পৌরসভার চান্দিয়ারা গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী নাজমূল হোসেন নাঈম (২৮)। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার বিকেল ৪টায় চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২-এর মমতাজ আহমেদ ভবনে কলেজ ছাত্রলীগ ও পৌর এলডিপি দুই সংগঠনের পক্ষ থেকেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুপুর থেকেই ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা উপস্থিত হতে শুরু করেন সেখানে। আড়াইটার দিকে কলেজ ক্যাম্পাস-২-এর প্রধান ফটকের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের সঙ্গে এলডিপি নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে উঠলে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ির জানালা খুলে গুলি করেন। এসময় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
স্থানীয়রা জানান, এসময় সবাই রেদোয়ানকে ঘেরাও করতে চাইলে তিনি থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। ওই সময় পুলিশ তাকে আটক করেছে বলে জানায়।
কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লিটন সরকার বলেন, পৌর অডিটরিয়ামে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানের বিরতির সময় নেতাকর্মীরা বের হলে রেদোয়ান আহমেদ তার গাড়ি থেকে গুলি চালান। এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মী ও ছাত্রলীগের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় রেদোয়ান আহমেদসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় রেদোয়ান আহমেদ ও তার গাড়ির চালকসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রেদোয়ান আহমেদের অস্ত্র ও গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া এক রাউন্ড গুলির খোসাও উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় পুলিশ পাহারায় গ্রেফতার রেদোয়ান আহমেদসহ চার জনকে চান্দিনা থানা থেকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর