দেশে হচ্ছে ‘ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’
১০ মে ২০২২ ০৯:২৮
ঢাকা: ন্যানো টেকনোলজি প্রয়োগ করতে চায় সরকার। এজন্য এ বিষয়ে গবেষণায় বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে স্থাপন করা হবে একটি ইনস্টিটিউট। সেখানে ন্যানো ম্যাটেরিয়াল তৈরি ও ক্যারাক্টারাইজেসনের আধুনিক সুবিধা-সংবলিত যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ন্যানো টেকনোলজিতে দক্ষ জনবল তৈরি করা হবে। এ লক্ষ্য পূরণে ‘ইনস্টিটিউট অব ন্যানো টেকনোলজি স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয় গত ২১ এপ্রিল। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পিইসি সভায় আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ইনস্টিটিউট অব ন্যানো টেকনোলজি স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।’
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো- ৬ তলা বিশিষ্ট বিশেষায়িত ভবন নির্মাণ এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ন্যানো টেকনোলজি ইন্সটিটিউট স্থাপন করা। এছাড়া চিকিৎসা, কৃষি ও বস্ত্রশিল্পে ন্যানো প্রযুক্তির বাস্তবমুখী ব্যবহারের বিষয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় জনস্বাস্থ্য, কৃষি, টেক্সটাইল ও পরিবেশের উপর বাস্তবমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং বৈদেশিক ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ আয়োজন ইত্যাদি।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ নেওয়ার জন্য প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) আহ্বান করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, ‘ন্যানোসায়েন্স এবং ন্যানো টেকনোলজি হলো ন্যানোস্কেলে বিভিন্ন বস্তুর অধ্যয়ন এবং অন্য সব বিজ্ঞানক্ষেত্র যেমন, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, বস্তুবিজ্ঞান, প্রকৌশলবিদ্যা প্রভৃতিতে এর প্রয়োগ করা। ন্যানোটেকনোলজি বলতে স্বতন্ত্র পরমাণু এবং অণুগুলি দেখার এবং নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বুঝায় যা পরমাণু প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারে ভূমিকা রাখে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউনেস্কো ঘোষণাপত্র ১৯৯৬ এ বলা হয়েছে, ন্যানো টেকনোলজি নতুন শতাব্দীতে সব প্রযুক্তির ভিত্তি দেবে। এর উপর ভিত্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ২০০১ সালে ন্যাশনাল ন্যানো টেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ গঠন করে। উন্নয়নশীল দেশগুলো যেমন, চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা ন্যানো টেকনোলজির সহযোগী গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন সাধন করেছে। ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ন্যানো টেকনোলজি সম্মেলনে বাংলাদেশ ন্যানো গবেষণার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলার কর্মপরিকল্পনায় ন্যানোপ্রযুক্তিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ পূরণেও ন্যানো প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম।’
সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ‘ন্যানোপ্রযুক্তি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। প্রস্তাবিত প্রকল্পে এ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে কী কী সুবিধা লাভ করা যাবে তার সহজ ব্যাখ্যা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ন্যানো টেকনোলজি বিষয়টি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার অধিক্ষেত্রভুক্ত এ বিষয়ে সভায় জানানো হয়, ন্যানো টেকনোলজি বিষয়ে গবেষণা, উন্নয়ন ইত্যাদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় করবে, এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেক্টরসহ অন্য সেক্টরও উপকৃত হবে। প্রস্তাবিত ন্যানো টেকনোলজি গবেষণার ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ কী অবস্থায় আছে, এ পর্যন্ত এ বিষয়ে আর কোন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে প্রকল্পের ফলাফল পুনর্গঠিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।’
সভায় জানানো হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিভিন্ন সেক্টরে যেমন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডিপিপি তৈরির সময় এ সমস্ত সেক্টরের বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিল, বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়। সভায় পরামর্শকের সংখ্যা এবং বৈদেশিক পরামর্শকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অগ্রগামী দেশ হতে পরামর্শক নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়।
অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি পিইসি সভায় জানান, প্রকল্পের অর্থায়ন সরকারি অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের আগে অনুমোদন নেওয়ার পত্র পুর্নর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করার বিষয়ে সব সদস্য একমত প্রকাশ করেন।
সভায় আরও জানানো হয়, প্রকল্পে ৬ তলা ভিত বিশিষ্ট ৬ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্বিকভাবে জমি স্বল্পতার বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ভবনটি ১০ তলা ভিতে নির্মাণ করা সমীচীন। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভবন নির্মাণের ড্রইং, ডিজাইন এবং কন্সট্রাকশন কাজের জন্য গঠিত কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সিল ও স্বাক্ষরসহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় কম্পিউটার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম মেরামত খাতের ব্যয় নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। কম্পিউটার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ও ওয়ারেন্টি পিরিয়ড থাকায় এ খাতে ব্যয কমানোর বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়। প্রকল্পে প্রশিক্ষণের জন্য প্রার্থী নির্বাচন, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বিষয় ও সংখ্যা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে মতামত দেওয়া হয়েছে।
সভায় বৈদেশিক ও স্থানীয় যন্ত্রপাতির বাস্তব প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ জনবল এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। এছাড়া বৈদেশিক ও স্থানীয় যন্ত্রপাতির মূল্য যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণ করে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে অন্তভুক্ত করার বিষয়ে একমত প্রকাশ করা হয়।
পিইসি সভায় বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- স্টেশনারি খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমাতে করতে হবে। এছাড়া যাতায়াত ভাতা খাতের প্রস্তাবিত অর্থ কমাতে হবে। বিমা খাতের ব্যয়ের যৌক্তিকতা বিস্তারিতভাবে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে। শ্রমিক মজুরি খাতে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা যেতে পারে।
সারাবাংলা/জেজে/এমও
দক্ষ জনবল ন্যানো টেকনোলজি পিইসি সভা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়