Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ মে ২০২২ ১৬:১৯

ফাইল ছবি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: সম্ভাব্য সব ধরনের অবকাঠামো ও নীতিগত সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমি এখন আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ সহজ করার জন্য সর্বোত্তম সম্ভাব্য নীতি কাঠামো এবং জোরালো সম্ভাবনার বিষয়ে আপনাদের আশ্বস্ত করব।

মঙ্গলবার (১০ মে) প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সফররত ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ বিজনেস ডেলিগেশনের সঙ্গে বৈঠকে এই আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস— আপনারা (মার্কিন কোম্পানি) এ সুবিধা নেবে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আইসিটি, অবকাঠামো, হালকা প্রকৌশল পণ্য, মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্য, অটোমোবাইল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ, সিরামিকের মতো সম্ভাব্য খাতে আরও বিনিয়োগ করবেন। আমি নিশ্চিত, আপনারা অনুকূল পরিবেশ বুঝতে সক্ষম হবেন এবং আপনারা বাংলাদেশে  সম্ভাব্য বিনিয়োগের আস্থা অনুভব করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন তৈরি পোশাক খাত, চামড়া, প্লাস্টিক, পাট, আইসিটি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং আরও অনেক খাতে অত্যাধুনিক উৎপাদন কারখানার জন্য স্বীকৃত। বর্তমান সময়টি আমাদের সময়। আপনারাও আমাদের অনুকূল পরিবেশে বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুযোগ নিন।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইউএস-বাংলাদেশ এনার্জি টাস্ক ফোর্স চালু হয়েছিল। এই টাস্ক ফোর্স দুই দেশের অংশীজনদের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে প্রস্তাবিত ইউএস-বাংলাদেশ ডিজিটাল ইকোনমি টাস্ক ফোর্স টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দুই দেশের কোম্পানির সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে অবদান রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ-মার্কিন বন্ধুত্ব অভিন্ন মূল্যবোধ ও অংশীদারিত্বমূলক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি আমাদের সম্প্রসারিত সার্বিক ব্যবসায়িক সম্পর্কের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধার মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করা যেতে পারে। বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে অন্যতম সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউএস চেম্বারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আশাবাদ জানান, এই সফর এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের ফলে প্রত্যাশিত ব্যবসা থেকে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের প্রসার ঘটবে এবং নিশ্চিতভাবে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে, যা থেকে দুই দেশের বেসরকারি খাত উপকৃত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি। এ কারণে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো থেকে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশকে এখন একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভৌত অবকাঠামোর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন উন্নত ও সহজ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ নীতি বাংলাদেশেই সবচেয়ে উদার। বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি সংসদের আইন ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি দ্বারাও সুরক্ষিত।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বাংলাদেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সড়ক, রেলপথ ও নৌ যোগাযোগের উন্নয়ন করছি। সারাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছি। আপনারা চাইলে কেবল মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্যই একটি জোন নির্ধারণ করে দিতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মনোযোগ জনসংখ্যার সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় এবং দক্ষ জনশক্তির বিকাশ। এর ফলে এখানে বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদ পাবেন। তাছাড়া আমাদের সরকার নাগরিকদের জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রবৃদ্ধির কৌশল অনুসরণ করছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিবিদ এবং সংস্থাগুলো দ্বারা টেকসই হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে অবস্থানের সময় মার্কিন অতিথিরা মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো দেখবেন এবং এসব প্রকল্প আরও বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদারদের অন্যতম এবং দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বড় অবদান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য এফডিআই ও রফতানি বাজারের একক বৃহত্তম উৎস। গত পাঁচ বছরে রফতানির পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বেড়েছে এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ বেড়ে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন হয়েছে।

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ড চেয়ার জে আর প্রাইর, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ড সদস্য এবং বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস এক্সিকিউটিভরা সভায় বক্তব্য রাখেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডার অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বৈঠক সঞ্চালনা করেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর