গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর: আসামিদের স্ত্রীরা সংবাদ সম্মেলনে
১০ মে ২০২২ ১৯:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরের মামলার দুই আসামির স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এসে তাদের স্বামীদের ‘নিরপরাধ’ বলে দাবি করেছেন। তারা এই মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার (১০ মে) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই আসামির স্ত্রী। তারা হলেন— পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বি এম জসিমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও সাবেক ইউপি সদস্য ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী লিও’র স্ত্রী সুবর্না দাশ।
গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের ব্রাহ্মণঘাটা গ্রামে গাউছিয়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়। গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় জিতেনের রক্তাক্ত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় তৈরি হয়। জিতেন হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
ঘটনার পর জিতেনের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় হাইদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ (বি এম) জসিম ও তার ছেলে মুশফিক উদ্দিন ওয়াসিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জসিম গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে হাইদগাঁও ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত হন। তার ছেলে ওয়াসি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাথী এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
একই মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামির মধ্যে হাইগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ চৌধুরীর নামও আছে। তবে ইন্দ্রজিৎ ‘পুলিশের ভয়ে’ পালিয়ে আছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী সুবর্না দাশ তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দাওয়াত না দেওয়ায় জিতেনকে মারধর করা হয়। ইন্দ্রজিৎ প্রথম ঘুষি মেরে ঘটনার সূত্রপাত ঘটান। এসময় তার সঙ্গে থাকা বাকি লোকজন জিতেন গুহকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইন্দ্রজিতের স্ত্রী সুবর্না দাশ অভিযোগ করেছেন, হাইদগাঁও ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দরিদ্রদের ৪০টি ঘর বণ্টনে অনিয়ম, এলাকায় জায়গা দখল, কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে নানা অপরাধের কারণে ক্ষুব্ধ লোকজন জিতেনকে মারধর করেছেন।
একই বক্তব্যে তিনি আবার বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারিকে ভিন্ন খাতে নিতে আমার স্বামী ও স্থানীয় চেয়ারম্যান বি এম জসিমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে জিতেন গুহ।’
এদিকে মারধরের ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন জিতেন কান্তি গুহ। তবে সংবাদ সম্মেলনে সুবর্না অভিযোগ করেছেন, জিতেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় গিয়ে প্রতিদিন মহড়া দিচ্ছে। এ কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা চান। একইসঙ্গে মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জিতেন কান্তি গুহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ঘটনার দায় থেকে বাঁচতে তারা স্ত্রীর মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা যদি নির্দোষ হন, সেটা আদালতে বলুক। তারা আইনের দ্বারস্থ হোক। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটারও তদন্ত হোক। আমি আইনের ঊর্ধ্বে নয়, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান বি এম জসিমের মা মজুনা বেগমও ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর