Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অনাহারে দিন কাটছে লক্ষাধিক ব্রিটিশের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১১ মে ২০২২ ০৯:৩৫

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যুক্তরাজ্যের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন তিন বেলা খেতে পারছেন না। গত মাসে পুরো একদিন কিছু না খেয়ে কেটেছে ২০ লক্ষাধিক ব্রিটিশের। জরিপে এসব উঠে এসেছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতি সাত জনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কোনো না কোনো বেলা খাবার খেতে পারেননি অথবা তাদের খাবার কেনার সামর্থ্য ছিল না।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ফুড ফাউন্ডেশন এই জরিপ চালিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, দেশটির ২৬ লাখ শিশুকে স্বাভাবিকের তুলনায় পরিমাণে কম খাবার খেতে হচ্ছে। ক্ষুধার্ত অবস্থাতেও কোনো না কোনো বেলার খাবার বাদ দিতে হচ্ছে অথবা একদমই খেতে পাচ্ছেন না লক্ষাধিক মানুষ ।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের প্রথম দফা লকডাউনের পর যখন প্রথমবারের মতো খাদ্য অনিরাপত্তা দেখা দেয়, তখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তখন খাদ্যাভাবে বা মানুষের অভাবের জন্য এমনটা হয়নি। ওই সময় লকডাউনের কারণে খাদ্য সরবরাহ ও অতিরিক্ত খাবার মজুতের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন দারিদ্র্য ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ খেতে পারছেন না বলে জরিপে উঠেছে।

ফুড ফাউন্ডেশনের জরিপের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনে প্রতিবছর ৭ শতাংশ হারে খাবারের দাম বাড়ছে, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগেই ব্যাংক অব ইংল্যান্ড চলতি মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। মূল্যস্ফীতির কারণে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছিল।

ফুড ফাউন্ডেশন চলতি বছরের ২২ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৭৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্য অনলাইনে এই জরিপ চালায়। এতে অংশ নেওয়া ১৪ শতাংশ ব্যক্তি বলেছেন, তারা সবাই বা পরিবারের অন্তত একজন ব্যক্তি গত মাসে পরিমাণে কম খেয়েছেন বা একবেলা খাবার বাদ দিয়েছেন কেনার সামর্থ্য না থাকায়। জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

জানুয়ারি মাসে খাদ্য অনিরপত্তায় ভোগা ব্রিটিশ নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৪৭ লাখ। তিন মাস পরে সেটি ৭৩ লাখে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ নাগরিকরা মনে করছেন, এর জন্য প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দায়ী এবং তিনি এর সমাধানেও কিছু করছেন না। শ্যাডো ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশন সেক্রেটারি জোনাথন অ্যাশওয়ার্থ এই জরিপের ফলাফলকে মর্মান্তিক আখ্যা দিয়ে বলছেন, এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে পরিবারগুলো কতটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিন পার করছে।

ব্রিটেনের অন্যতম বড় জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে পরিবারগুলোর জন্য শীতে বাড়তি এক হাজার পাউন্ড বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের বোঝা কমানোর জন্য সরকারি সহায়তা চাওয়ার পর এই সমীক্ষাটি করা হয়। এদিকে, এক ব্যক্তির বসার ঘর উষ্ণ রাখার জন্য কাঠ জ্বালানোর পর তার বাড়িতে আগুন লাগার পর লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড বাড়িতে আগুন জ্বালানোর বিরুদ্ধে একটি জরুরি নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করতে বাধ্য হয়েছিল।

খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যও বলছে, অনেকেই গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের চাপ সামলাতে না পেরে অনুরোধ করেছেন, রান্না ছাড়াই খাওয়া যায় কিংবা ফ্রিজে রাখতে হয় না, এমন খাবার সরবরাহের অনুরোধ করছেন তারা।

ব্রিটেনের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির এই দ্রুত অবনতির পেছনে রয়েছে বাড়তি গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা, খাবার ও পেট্রোলের বাড়তি দাম ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব। ফুড ফাউন্ডেশন জানায়, তারা প্রাথমিক জরিপের ফলাফল দেখে এতটাই অবাক হয়েছিল যে আবারও সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। এ পর্যায়ে তারা আরও বিস্তৃত পরিসরে সমীক্ষা চালায়, কিন্তু ফলাফল একই আসে।

ফুড ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যদ্বাণী, ঊর্ধমুখী মুদ্রাস্ফীতি, বিদ্যুতের বাড়তি মূল্য এবং এপ্রিলের জাতীয় বিমার অর্থ বৃদ্ধি পারিবারিক বাজেটে প্রভাব ফেললে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসে আরও খারাপ হবে।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যানা টেইলর খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আরও বিস্তৃত প্রভাব দেখছেন। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত খেতে না পারলে ক্যালরি ঘাটতির কারণে মানুষ শুধু নানারকম শারীরিক অসুখেই ভুগবে না, এর ফলে সে অসম্ভব রকম মানসিক চাপেও পড়বে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্যার মাইকেল মারমথ দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, প্রতি সাতটির মধ্যে একটি পরিবারে খাদ্যাভাব দেখা দেওয়া আমাদের সমাজের মৌলিক ব্যর্থতা। খাদ্য অনিরাপত্তার এই চিত্র দেখে যতটা গা শিউরে উঠছে, সমাধানযোগ্য এই সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ না নেওয়াটা তার চেয়েও বেশি আতঙ্কের।

তবে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে জনসাধারণের উদ্বেগ বাড়লেও ব্রিটিশ মন্ত্রীরা যত দ্রুতসম্ভব সুবিধা বাড়াবেন বা বিনামূল্যে স্কুলের খাবারের পরিমাণ বাড়াবেন— এমন প্রত্যাশা কম। গত সপ্তাহে পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রামীণ বিষয়ক সেক্রেটারি জর্জ ইউস্টিস ভোক্তাদের খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় কাঁচাবাজারের খরচ বাঁচাতে মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডগুলোতে সুইচ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় পোর্টসমাউথের একজন অফিস ব্যবস্থাপক এবং খাদ্যকর্মী ক্যাথলিন কেরিজ বলেন, তার প্রতি আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। তিনি এতটাই দরিদ্র যে পৃথিবীতে সস্তা ব্র্যান্ডের খাবার আছে, সেটি সম্পর্কে তিনি অবগত। গরীব হলেও নিরাপদ পরিবেশে বড় হওয়া এই ব্যক্তি মনে করেন টিনে সংরক্ষিত ১০টি শিম দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে!

এদিকে, বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার করে সতর্ক করছে, বাজেট কমলেও সাহায্যপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, এমন অনেক মানুষকেই তারা খাদ্য সহায়তা নিতে আসতে দেখছেন, যারা প্রথমবারের মতো এসেছেন। তাদের চোখভরা অশ্রু বলছে, এ পরিস্থিতি তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপকে স্বীকার করছি এবং আমাদের পক্ষে করণীয় সবই করে যাচ্ছি। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল ও জ্বালানি শুল্ক কমানোর জন্য আগামী অর্থবছরে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করা হবে।’

‘সবচেয়ে কঠিন ধাক্কা সামলানোর জন্য, আমরা কর্মরত পরিবারগুলোর জন্য সর্বজনীন ক্রেডিটের ওপর বছরে গড়ে আরও ১০০০ পাউন্ড বেশি দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেইসঙ্গে ফুল-টাইম কর্মীদের জন্য বার্ষিক গড় বেতন আরও এক হাজার পাউন্ড বাড়াচ্ছি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের খরচে সাহায্য করার জন্যও তহবিল রয়েছে,’— বলেন এই কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যুক্তরাজ্য

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর