Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেটের ১ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ মে ২০২২ ১৬:১১

ঢাকা: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

বুধবার (১১ মে) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।

লিখিত বক্তব্যে জোটের পক্ষ থেকে ১৭টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। বলা হয়, জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ করতে হবে। এ বরাদ্দের বড় একটি অংশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সংগঠনের অনুদান, শিল্পীদের সম্মানি ও বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রতিটি উপজেলায় ৫০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ ও এর সঙ্গে মহড়া, প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কয়েকটি কক্ষ নির্মাণ করতে হবে। উপজেলা সদরে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করতে হবে। একটি বিশেষ প্রকল্প নিয়ে প্রতি বছর অন্তত ১০০টি উপজেলায় এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের সবগুলো উপজেলায় সংস্কৃতি চর্চার নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।

প্রতিটি জেলায় ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মৃতিভবন’ নির্মাণের প্রস্তাব তুলে ধরে বলা হয়, ভবনে ৭০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন, মহড়া ও কর্মশালার কক্ষ, সেমিনার হল, পাঠাগার, ক্যান্টিন ও ৫ থেকে ১০ জন থাকার মতো কক্ষের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীসহ অন্যান্য মহানগর এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রতি পাঁচ লাখ নাগরিকের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি করে আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ করতে হবে।

প্রস্তাবনায় রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় একটি করে স্থায়ী যাত্রাপালার প্যান্ডেল নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে প্রতিটি জেলায় চারুকলা প্রদর্শনীর জন্য আর্ট গ্যালারি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর জন্য মিনি অডিটরিয়াম নির্মাণের কথা।

সংস্কৃতিকর্মীদের মাসিক অনুদান বাড়ানোর দাবি জানিয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, বয়স্ক শিল্পীদের অসচ্ছল বিবেচনায় যে ভাতা দেওয়া হয় তা অত্যন্ত নগণ্য এবং একেবারে নিরুপায় না হলে কেউ আবেদনই করেন না। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে অনুদাম দেয়, তাতে অধিকাংশ শিল্পীর অনুদানই মাসিক ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। জাতীয় পর্যায়ের কয়েকজন শিল্পী সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় অসচ্ছল শিল্পীদের মাসিক অনুদানের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হোক। এক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে আরও বেশি শিল্পীকে অনুদানের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে।

সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বরাদ্দ বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশের ১ হাজার ৪৫০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে মোট সাত কোটি ৪ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। সংগঠনগুলোকে দেওয়া অনুদানের আর্থিক পরিমাণ ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রিয়াশীল প্রতিটি সংগঠনের বার্ষিক ব্যয় প্রতিবছর কয়েক লাখ টাকা। সাংস্কৃতিক জোটের প্রস্তাবনা, এ ক্ষেত্রে অনুদানের পরিমাণ সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা হতে হবে। সারাদেশে আনুমানিক ১০ হাজার সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। যাচাই-বাছাই করে অন্তত পাঁচ হাজার সংগঠনকে অনুদানের আওতায় আনার দাবি তাদের।

জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোর সারাবছরের কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও জাতীয় পর্যায়ে অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎসব আয়োজনকারী মূলধারার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অন্তত ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। এছাড়া ‘সম্প্রীতির জন্য সংস্কৃতি’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তুলতে জাতীয়ভিত্তিক ফেডারেশনগুলোকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য চলতি অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক জোট তাদের প্রস্তাবনায় আরও বলেছে, উপজেলা পর্যায়ে অবিলম্বে একজন করে শিল্পকলা কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীদের প্রশিক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলায় সংগীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও চারুকলার স্থায়ী প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বেতার-টেলিভিশনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানে শিল্পী, যন্ত্রী ও কারিগরিকর্মীদের যুগপোযোগী আর্থিক সম্মানির দাবিও জানিয়েছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোর স্থায়ী দফতর নির্মাণের জন্য মতিঝিলের ক্রীড়াপল্লির মতো জায়গা বরাদ্দের কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। বহুমুখী শিক্ষার পরিবর্তে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে তাতে মুক্তিযুদ্ধ ও মানবসভ্যতার ইতিহাস, অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক চিন্তা সম্বলিত লেখা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমে সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি বছর সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে।

জোট বলছে, সরকারের বড় বড় সাংস্কৃতিক আয়োজনে জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোকে সম্পৃক্ত করে শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাই বাঞ্ছনীয়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসব বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনার সঙ্গে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে যুক্ত করতে হবে। আমলাতন্ত্রের সংস্কৃতিচর্চা ও আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে।

সংস্কৃতিকর্মীদের আবাসনের জন্য ‘সংস্কৃতিপল্লি’ নির্মাণের দাবি জানিয়ে প্রস্তাবনায় জোট বলছে, আমাদের প্রত্যাশা— সংস্কৃতি, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলো আমাদের বক্তব্যের গুরুত্ব ও যৌক্তিকতা অনুভব করে যথাযথ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নেবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সালমান শাহ্‌কে হারানোর ২৮ বছর
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৪

সম্পর্কিত খবর