Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটে

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২২ ০৯:১৪

ছবি: সারাবাংলা

মানিকগঞ্জ: জেলার ঘিওর উপজেলার প্রায় ২০০ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট। প্রতি বছর হাট থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করছে সরকার। আর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। এরপরও নানা সমস্যায় জর্জরিত হাটটি। ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় পুরো হাট এলাকায়। নোংরা আবর্জনা আর খানাখন্দের কারণে ব্যবসা করতে গিয়ে চরমভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শত শত ব্যবসায়ী। বিশেষ করে বৃষ্টির এই সময়ে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই হাটের অলিগলিসহ কয়েকটি প্রবেশ পথ পানিতে ডুবে যায়। ফলে হাটে বেচাকেনা করতে আসা হাজারও মানুষ পড়েন সীমাহীন দুর্ভোগে। এক-দুই বছর নয়, এই দুর্ভোগ চলছে হাটের জন্মলগ্ন থেকেই।

বিজ্ঞাপন

সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ বুধবার করে বসে ঘিওর হাট। এক দিনেই এখানে কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। এছাড়া প্রতিদিন হাটের বাজার এবং দোকানগুলোতে লাখ লাখ টাকার ক্রয়-বিক্রয় হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এই হাট ও বাজারটির দুর্ভোগের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মানুষ। সামান্য বৃষ্টিতে হাটের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ। সামনে বর্ষা এবং অবিরাম বৃষ্টিতে অচল হয়ে পড়বে এমন আতঙ্কে রয়েছে সেখানকার ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। দীর্ঘদিনেও এই অবস্থার কোনো প্রতিকার মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটটি সপ্তাহে ১ দিন অর্থাৎ বুধবার করে বসে। এখানে মানিকগঞ্জ জেলা ছাড়াও টাঙ্গাইল, ঢাকা, গাজীপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার মানুষও ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আসেন। তবে জলাবদ্ধতা ছাড়াও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে এই হাটে। রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে নেই কোনো ল্যাম্প। ফলে রাতের বেলায় অনেক সমস্যা হয় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। ঘিওর হাট-বাজার থেকে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও, বিন্দু মাত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

অল্প বৃষ্টি হলেই ঘিওর পুরাতন গরু হাটাসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সব ধরনের কর, ট্যাক্স প্রদান করলেও নূন্যতম নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত ঘিওর হাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। এই দুর্দশা দেখার মতো যেন কেউ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।

হাটের কাপড় ব্যবসায়ী মোসলেম মিয়া জানান, সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় হাটের গলির পথ। যার ফলে দুই একদিন আর এই পথে কোনো ক্রেতা অসেন না। অস্থায়ী জুতা বিক্রেতা সুধীর দাসও একই দাবি করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সকালে হাঁটু জল মারিয়ে দোকান খুলে দেখি আমার সব জুতা ঘরের ভেতর পানিতে ভাসছে। এর কি কোনো প্রতিকার নেই?’

বিজ্ঞাপন

প্রতি হাটে দুধ কিনতে আসা জীবন ঘোষ বলেন, ‘৩০ বছর ধরে এই হাট এবং বাজার থেকে দুধ কিনে ছানা তৈরি করে মিষ্টি বানাই। হাট বাজারের অবস্থা এতোই শোচনীয় যে, সামান্য বৃষ্টি হলে হাটে প্রবেশ করা যায় না। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে অন্যত্র গিয়ে দুধ কিনতে হয়।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঘিওর বাসস্ট্যান্ড, ধান হাটা, কাঠ পট্টি, দুধ বাজার, মাছ বাজার, চাউল বাজারসহ ৭টি স্পটে একই রকম বেহাল দশা। ঘিওর পুরাতন গরু হাটসহ আশপাশের নানা জায়গায় ৫ থেকে ১০ মিনিটের বৃষ্টিতেই হাটু পানি জমে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

কাঠ পট্টির ব্যবসায়ী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সাপ্তাহিক হাটের দিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার সাইজ কাঠ বিক্রি করি। এই আয় দিয়েই চলে আমার সংসার। কিন্তু বৃষ্টির কারণে প্রবেশ রাস্তায় হাটু পানি থাকায় কোনো ক্রেতাই আসেনি। আমরা নিয়মিত খাজনা দেই, তারপরেও কেন এমন ভোগান্তি?’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য জানান, ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে ঘিওর বাসস্ট্যান্ড, ধান হাটা ও গরু হাটার কয়েকটি স্থানে নলকূপ ও শৌচাগার নির্মাণ করা হলেও অল্প দিনেই সেগুলো ভরাট হয়ে যায়। ফলে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যত্রতত্র প্রস্রাব ও মলত্যাগ করায় উৎকট গন্ধে দোকানদার ও হাটুরেদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তবে পরিকল্পিত ও মানসম্মত উন্নয়ন কাজ না করায় রাস্তা-ঘাট ও বাজারের এমন অবস্থা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঘিওর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ. মতিন মুসা জনান, ঘিওর বাজারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

ঘিওর সদর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও উর্ধ্বতন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অবিলম্বে বাজারের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হামিদুর রহমান বলেন, ‘বৃহত্তম ঘিওর হাট-বাজারের সমস্যার কথা জানার পর একধিকবার সরেজমিন পরিদর্শন করে কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত এই কাজগুলো শেষ করলে হাটের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তখন হাটে ক্রয়-বিক্রয় করতে আসা মানুষজনের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’

সারাবাংলা/এনএস

ঘিওর হাট মানিকগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর