হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদার ভারতে গ্রেফতার
১৪ মে ২০২২ ১৭:৩৭
ঢাকা: দেশ থেকে হাজার কোটি পাচারকারী এনআরবি গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেফতার করেছে ভারতীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পি কে হালদারসহ এ পর্যন্ত মোট ৬ জনকে হেফাজতে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে পি কে হালদারের স্ত্রী ও তার ভাইও রয়েছেন।
এর আগে ১৩ মে ভারতের অন্তত ১০টি স্থানে অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারের ২২টি বাড়ির সন্ধান পায় ইডি।
অভিযানে পি কে হালদারের সহযোগী স্বপন মিত্র ও তার দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া মুর্শিদাবাদের কাটুয়া থেকে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পি কে হালদারের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর তাকে ধরতে অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। কোথায় কোথায় পি কে হালদারের সম্পত্তি রয়েছে তাও জানার চেষ্টা করছে তারা।
ভারতের পাশাপাশি কানাডা ও ইন্দোনেশিয়াতেও পি কে হালদারের সম্পত্তি রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র দাবি করেছে।
গতকাল শুক্রবার কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পায় ভারতের ইডি।
পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী।
ভারতী পল্লি এলাকার পাশে নবজীবন পল্লিতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পি কে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করত।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তদন্তে জানা যায়, এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি। এর মধ্যে শুক্রবার শুধু অশোকনগরেই তিন বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হালদার।
পি কে হালদারের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযান চালায় ইডি। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া যায়।
অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় পি কে হালদার চক্রের একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে।
বহুল আলোচিত অর্থ পাচার মামলার আসামি পি কে হালদার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। তাকে প্রত্যর্পণের জন্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানতে পারে পলাতক পি কে হালদারের বিপুল সম্পদ রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশেকনগরে আছে পি কে হালদারের বাড়ি। এ ছাড়া ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যে তার বাড়ি আছে।
হাজার কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে দেশত্যাগী প্রশান্ত কুমার হালদারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা।
পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎস ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। বিভিন্ন সময়ে পি কে হালদার আর্থিক সুবিধা ও মূল্যবান উপহার দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ওই দুই কর্মকর্তাকে বশে রেখে দুর্নীতির মাধ্যমে অবাধে অর্থ লোপাট করেছে।
বরিশালের পিরোজপুরে বাসিন্দা পি কে হালদার। তার বাবা প্রয়াত প্রণবেন্দু হালদার পেশায় ছিলেন গ্রাম্য বাজারের দর্জি। মা শিক্ষিকা। পিকে হালদারের দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর তার মা ভারতে ছেলে প্রাণেশ হালদারের বাড়ি চলে যান।
পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন সুকুমার মৃধা। পি কে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সুকুমার মৃধাকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় আসামি করা হয়।
দুদক এরইমধ্যে সুকুমার মৃধাকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
সারাবাংলা/একে