সয়াবিনের পর সরিষার তেলের বাজারেও আগুন
১৪ মে ২০২২ ১৯:১০
ঢাকা: তেল নিয়ে বাজারে তেলেসমাতি কারবার চলছেই। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পর কেউ মজুতে ব্যস্ত, কেউ আবার আগে কম দামে কেনা বোতলজাত তেল ড্রামে ঢেলে নতুন দামে বিক্রি করছে। কোনো কোনো দোকনদার আবার মজুত করে ধরাও পড়ছে। তখন ধরা পড়া সেই তেল বোতলের গায়ের দামে বিক্রি করা হচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। এরকম পরিস্থিতি যখন চলছে তখন সরিষার তেলের বাজারও গরম হয়ে উঠছে। দুই মাসের ব্যবধানে বাজারে লিটারপ্রতি সরিষার তেলের দাম বেড়েছে মান ভেদে অন্তত ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে কোনো একটি পণ্যের দাম বাড়লে অন্যান্য পণ্যেরও দাম বাড়ানো হয়। আর ব্যবসায়ীদের দাবি, সরিষার দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ও এলাকাভিত্তিক মেশিনে সরিষা ভাঙিয়ে তেল বিক্রি করা ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গেন্ডারিয়ার আতিকুল ইসলাম। তিনি প্রতি মাসেই মতিঝিল থেকে সরাসরি মেশিনে ভাঙানো সরিষার তেল কেনেন। গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) সন্ধ্যা ৭টায় মতিঝিল দিলকুশা স্টার ভবনের সামনে তেল কিনছিলেন। এ সময় কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক লিটার সরিষার তেল কিনলাম ২৬০ টাকা দিয়ে। রোজার ১৫ দিন আগে কিনেছিলাম ২৪০ টাকায়। তারও এক মাস আগে কিনেছিলাম ২২০ টাকা। ২২০ টাকা লিটার প্রায় এক বছর ধরে কিনেছি। অর্থাৎ গত দুই মাসে প্রতি লিটারে ৪০ টাকা বেড়েছে সরিষার তেলের দাম।’
ওই গ্রাহক আরও বলেন, ‘আমরা যারা সয়াবিন তেল বাদ দিয়ে সরিষার তেলে রান্নায় ব্যবহার করি, তারা বিপাকে পড়েছি। এরপরও আমাদের সরিষার তেলই খেতে হবে। সরকার কখনো যদি সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয় তাহলে হয়তো দাম কমে আসতে পারে।’
মতিঝিলের ভ্রাম্যমাণ তেল বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রোজার আগে যখন সরিষার তেল বিক্রি করেছি তখন সরিষার মণ ছিল তিন হাজার ৬০০ টাকা। তার এক মাস আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির দিকে সরিষার মণ ছিল দুই হাজার ৮০০ টাকা। এখন সেই সরিষার মণ হয়েছে চার হাজার ২০০ টাকা। সেই হিসাবে সরিষার লিটার বেচতে হয় কমপক্ষে ৩০০ টাকা। কিন্তু আমরা সীমিত লাভ রেখে বিক্রি করছি ২৬০ টাকা লিটার। দাম যদি আর বাড়াই তাহলে বিক্রি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই ২০ টাকা দাম বাড়াতেই বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
শুক্রবার (১৩ মে) মুগদা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে ভ্রাম্যমাণ মেশিন বসিয়ে সরিষা ভাঙাচ্ছিলেন আরমান মিয়া। তিনি সরিষার তেল বিক্রি করছেন ২৬০ টাকা লিটার। এর আগে বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকা আর ২৩০ টাকা। এখন ২৬০ টাকা বিক্রি করলেও আগামীতে ২৮০ টাকা বিক্রি করবেন বলে ক্রেতাদের জানিয়ে রাখছেন তিনি।
কবে নাগাদ ২৮০ টাকা লিটার বিক্রি করবেন? জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন সরিষার মণ মান ভেদে চার হাজার থেকে চার হাজার ২০০ টাকা। এই দাম আরও বাড়বে। এই দাম চার হাজার ৫০০ টাকা হলে দাম ২৮০ টাকা করা হবে। এরপর আরও বাড়লে তেলের দামও বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা চাই দাম কমই থাক। দাম কম থাকলে আমরা বিক্রি বেশি করতে পারি। দাম বাড়লে বিক্রি কমে যায়। আমরা যদি কম দামে সরিষা কিনে মজুদ রাখতে পারতাম তাহলে সারাবছর একই দামে বিক্রি হতো। বড় বড় তেলের কোম্পানিগুলো সারা বছরের সরিষা একবারে কিনে মজুত করে রাখে। এরপরও তারা দাম বাড়িয়েছে।’
সুত্রাপুর বাজারের মুদি দোকানদার আজগর আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘খোলা সরিষার তেল লিটারে ৪০ টাকা বেড়েছে। আর বোতলজাত সরিষার তেলে প্রকার ভেদে ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সরিষার তেলেরও। নতুন করে আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও আলুতেও দাম বেড়েছে। সব জিনিসের দাম বাড়ায় বিক্রি কমে গেছে। মানুষ কম খাচ্ছে মনে হচ্ছে। কারণ বিক্রিতেই বোঝা যাচ্ছে।’
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মদিনা ব্রান্ডের সরিষার তেল প্রতি লিটারে বেড়েছে ২৫ টাকা। হাফ লিটারে ১৫ টাকা আর আড়াইশ গ্রামের বোতলে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। রাধুঁনী সরিষার তেলেও দাম বেড়েছে লিটারে ৩০ টাকা। ১০০ গ্রামের বোতলে বেড়েছে ৫ টাকা। প্রাণ সরিষার তেলে বেড়েছে লিটারে ২০ টাকা।
যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী আব্দুস ছাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম ২০০ টাকার বেশি। কাজেই সরিষার তেলের লিটার যদি ২৬০ টাকা হয় তাহলে খুব বেশি হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ বাজারে সরিষার দাম বেড়েছে। এবার মৌসুমেই সরিষার মণ ছিল ২৭০০ টাকা। যা অন্যান্য বছরগুলোতে দুই হাজার টাকার নিচে থাকতো। বড় কোম্পানিগুলো সারা বছরের সরিষা কিনে রাখার কারণেই এবার এই আকাশচুম্বী দাম হয়েছে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক বছর আগে সরিষার তেলের দাম ছিল ১৮০ টাকা লিটার। এখন তা বেড়ে ২৬০ টাকা লিটারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ এক বছরে দাম বেড়েছে ৮০ টাকা। আবার কোথাও কোথাও দাম বেড়েছে লিটারে ১০০ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংলক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর শাহরিয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষকদের তেলবীজ চাষাবাদে মনোযোগ দিতে হবে। আবাদ যত বাড়বে দাম ততই কমে আসবে। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে আমরা সব সময় মাঠ কাজ করছি। অযৌক্তিকভাবে কোথাও কেউ দাম বাড়িয়ে থাকলে আমাদের জানালে ব্যবস্থা নেব।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম