Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারী জনশক্তি রফতানিতে ঊর্ধ্বগতি, ৪ মাসে প্রবাসী ৪৩ হাজার জন

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ মে ২০২২ ২২:৫৯

ঢাকা: গত কয়েক বছরে নানা হয়রানি ও প্রতারণার কারণে শ্রমবাজারে নারী শ্রমিকদের প্রবেশে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটা কাটতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, এ বছরের প্রথম চার মাসেই নারী জনশক্তি রফতানি আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত চার মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ৪৩ হাজার ৬১০ জন নারী।

জনশক্তি রফতানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারি করোনার প্রভাব কেটে যাওয়ায় অনেক দেশেই কাজের নতুন সুযোগ হয়েছে। সেখানে পুরুষের পাশাপাশি রয়েছে নারীদের চাহিদাও। অন্যদিকে শ্রমবাজারে যেতে মানুষ এখন অনেকটা সচেতন। ফলে হয়রানি ও প্রতারণার প্রবণতা কমে আসছে। তবে বিদেশে নারীদের কর্মপরিবেশে নিরাপত্তা ও ন্যায্য মজুরি নির্ধারণে এখনো অনেক বৈষম্য রয়েছে। এ বিষয়গুলোতে সরকারকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

বিএমইটি’র তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ৪৩ হাজার ৬১০ জন নারী। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে গেছেন ১০ হাজার ২৯০ জন, ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ১০ হাজার ৬১২ জন। মার্চে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ১১ হাজার ২১১ জন। সবশেষ এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা আরেকটু বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৪১৭ জন।

আরও পড়ুন-

প্রবাসী আয়ে নারীর অবদান বাড়ছে

জনশক্তি রফতানিতে বাড়ছে নারী, দক্ষ শ্রমিক পাঠানোই বড় চ্যালেঞ্জ

ভাগ্য বদলের আশায় মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েও বেতনভাতা পাননি ৩৭ শতাংশ নারী

চার মাসে কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়া নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারীর গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। দেশটিতে গৃহকর্মী থেকে শুরু করে নানা খাতে দেশটিতে এই চার মাসে গেছেন ২৭ হাজার ৩১৯ জন নারী কর্মী, যা মোট নারী জনশক্তি রফতানির ৬২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নারীর গন্তব্য ছিল ওমান। এই দেশটিতে গেছেন ৭ হাজার ৯৭৫ জন নারী কর্মী, যা মোট নারী জনশক্তি রফতানির ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৯৮ জন বা প্রায় ১৫ শতাংশ নারী গেছেন জর্ডানে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া কাতারে ৭৯০ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৪৯ জন, লেবাননে ৮৮ জন, কুয়েতে ৩৭ জন, মরিশাসে ২৮ জন, সিঙ্গাপুরে ২৪ জন ও লন্ডনে গেছেন ১৩ জন নারী কর্মী। এর বাইরে মালয়েশিয়ায় ৮ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭ জন, জাপানে ৩ জন, ইতালিতে ২ জন এবং ১৬৯ জন নারী কর্মী কাজ নিয়ে গেছেন অন্যান্য দেশে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত তৈরি পোশাক শিল্প, নার্সিং ও গৃহকর্মী কাজগুলোর জন্য বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয় বেশি।

এদিকে, একসময় বাহারাইন, লেবানন, জর্ডান, হংকংয়ের মতো দেশগুলোতে প্রচুর নারীকর্মী পাঠানো হতো। তবে সেসব দেশে জনশক্তি রফতানি একরকম বন্ধই হয়ে গেছে। গত চার মাসের হিসাবে দেখা গেছে, বাহারাইনে একজন নারী কর্মীও পাঠানো যায়নি। লেবাননে ৮৮ জন গেলেও লিবিয়া, ইরাক, ব্রুনেই, হংকং, সুদান ও সাইপ্রাসে একজন নারী কর্মীও যাননি।

গত কয়েক বছরে শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে গিয়ে নারীদের সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হতে দেখা গেছে। নিয়োগকর্তার অত্যাচার-নিপীড়নে শতাধিক নারী কর্মী লাশ হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। অভিযোগ রয়েছে, সৌদি আরবে নারীরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন বেশি।

বিদেশ ফেরত কর্মীদের নিয়ে কাজ করে থাকে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচি ওকাপ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. শাকীরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গত কয়েক বছরে পুরুষ কর্মীদের চেয়ে নারী কর্মীদের ফিরে আসার চিত্রটি ছিল ভিন্ন রকম। অনেকেই শরীরে ক্ষত নিয়ে ফিরেছেন। দালালদের মাধ্যমে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হয়ে ফিরেছেন। শ্রমবাজারে নারীদের চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা পূরণে নারী কর্মীদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি তাদের কাজের নিরাপত্তার বিষয়টিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

গত বছর একটি বেসরকারি সংস্থা নারী প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণা অনুযায়ী, দেশের জনশক্তি রফতানির ৮০ শতাংশই পুরুষ। গত এক দশকে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে বৈদেশিক শ্রমবাজারে নারীর প্রবেশ বেড়েছে। তবে সেটি খুবই ধীর গতিতে। এই সময়ে নারী জনশক্তি রফতানির পরিমাণ আরও বেশি এগিয়ে নেওয়া যেত।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, দালালদের মাধ্যমে যেসব নারী কাজের জন্য দেশের বাইরে যান, তারাই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। তাই তারা দালালের মাধ্যমে না গিয়ে সরকারিভাবে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার আহ্বান জানান।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, অসাধু চক্রটি সবসময় গ্রামের কম শিক্ষিত নারীদের বেছে নেয়। কারণ একদিকে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সহজ, অন্যদিকে সে বিপদে পড়লে তাকে সহজে বিচারের আওতায় আনতে পারবে না। এসব দালালদের কারণেই নারী কর্মীরা প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। তাই দালালের মাধ্যমে বিদেশে না গিয়ে সরকারের মাধ্যমে বৈধ পথে বিদেশযাত্রার পরামর্শ দেন তিনি।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

জনশক্তি রফতানি নারী কর্মী নারী জনশক্তি রফতানি বিএমইটি শ্রমবাজার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২ দিনে আয় ২৮৯ কোটি টাকা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩২

মৌসুমী হামিদের সংসার যেমন চলছে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:২৬

সম্পর্কিত খবর