প্রকৃতি বিরূপ, তবুও হালদায় ‘কিছু ডিম’ ছেড়েছে মাছ
১৬ মে ২০২২ ১৭:২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রকৃতির পরিবেশ অনুকূলে না থাকলেও অর্থাৎ বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ছাড়াই উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়ে দিয়েছে কার্প জাতীয় প্রজনন সক্ষম মাছ। তবে পরিমাণে খুবই কম।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি মৌসুমে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ার আগে কিছু নমুনা ছেড়ে দেয় ‘মা মাছ’। এবার যে পরিমাণ ডিম ছেড়েছে তা নমুনার চেয়ে বেশি, আবার প্রত্যাশিত পরিমাণেও নয়।
গতবছরও প্রথম দফায় খুবই কম পরিমাণে ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। ১০ দিনের মাথায় বর্ষণ শুরু হলে ফের ডিম ছাড়ে। তখন ডিমের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। সেই অভিজ্ঞতায় এবারও ডিম সংগ্রহকারীদের আশা, বর্ষণ শুরু হলে আবার ডিম ছাড়বে মা মাছ। নৌকা নিয়ে ডিম আহরণকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন হালদা নদীতে।
ভরা পূর্ণিমার মধ্যে সোমবার (১৬ মে) ভোর থেকে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে।
নদীতীরে অবস্থান করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট থেকে রাউজান উপজেলার রামদাশ মুন্সীর হাট পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে মা মাছ ডিম ছাড়ে। স্থানীয় সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করেন।
চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে আছে হালদা নদী। বিভিন্ন স্থানে যেখানে সাধারণত মা মাছ ডিম ছাড়ে, সেখানে প্রায় ৩০০ নৌকায় দেড় হাজার মৎস্যজীবী ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রচুর নৌকা এখন নদীতে আছে। হাজারের বেশি ডিম সংগ্রহকারী অপেক্ষায় আছেন। আমরা পর্যাপ্ত হ্যাচারি প্রস্তুত রেখেছি। তিন-চার স্তরের ব্যাকআপ রেখেছি। আমাদের আশা, এবার অনেক বেশি ডিম পাব। ডিম যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে।’
প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।
মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার নদীর পরিবেশ অনেক ভালো। দূষণ নেই বললেই চলে। পানির মান ভালো। ইঞ্জিন নৌকা নেই। নৌ পুলিশ ও প্রশাসন খুবই পরিশ্রম করেছে। সবকিছু আমাদের অনুকূলে আছে। শুধু অনুকূলে নেই বৃষ্টি। মে মাসের মাঝামাঝি সময়েও বৃষ্টি না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তবুও মা মাছ কিছু ডিম ছেড়েছে। বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল না থাকার পরও এবং উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেই ডিম ছেড়েছে। আসলে পূর্ণিমার কারণে নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে। পানি পেয়ে কিছু ডিম রিলিজ করে দিয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলে পুরোপুরি ছাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’
২০২১ সালে সংগ্রহ করা ডিমের পরিমাণ প্রকাশ করেনি মৎস্য অধিদফতর। তবে সংগ্রহকারীরা জানিয়েছিলেন, প্রত্যাশিত পরিমাণে ডিম পাওয়া গিয়েছিল।
২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি।
এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর