ঢাকা: কেবল শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য এবং তার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
তিনি বলেন, নেত্রী তার কর্মের মাধ্যমে সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, একমাত্র শেখ হাসিনাই অপরিহার্য বাংলাদেশের জন্য। শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
সোমবার (১৬ মে) সকালে ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা ছাড়াও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি, হুইল চেয়ার ও সাদা ছড়ি বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ পরশ বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল পাঁচ বার। আর শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন করেছে, শক্তিশালী করেছে। আজ একটি মেসেজ ক্লিয়ার— দুর্নীতিবাজ যেই হোক, কারও রক্ষা নেই। আজ দলীয় নেতাকর্মী বলেন আর প্রশাসনিক আমলা বলেন— দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার এ দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছিল। আর শেখ হাসিনা সরকার জঙ্গিবাদ এ দেশ থেকে নির্মূল করে দিয়েছে। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করে দিয়েছে। তাই এমপি বলেন আর প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন— কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, সাজা হচ্ছে। পঁচাত্তর পরবর্তী অনেক সরকার দেখেছি। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের মতো সততা-ন্যায়পরায়ণতা আর কোনো সরকার দেখাতে পারেনি এই ৫০ বছরে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস প্রসঙ্গে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, ১৯৮১ সালের এই ১৭ মে নেত্রী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বলে এ দেশের মানুষ ও আমরা প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং আদর্শিক নেতৃত্ব ফিরে পেয়েছি। দীর্ঘ ছয় বছর শরণার্থী ও নির্বাসনের জীবন কাটিয়ে, সব ভয়কে উপেক্ষা করে, এ দেশের মানুষকে ভালোবেসে তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মাথায় কাফন বেঁধে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন সেই যন্ত্রণাবিদ্ধ বর্ষায়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ থেকে আমাদের নেত্রী কখনো বিচ্যুত হননি। বরং বঙ্গবন্ধুর সামাজিক ন্যায় বিচার ও ন্যায়পরায়ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনা দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে জাতির পিতা হত্যার বিচার সম্পন্ন করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। আজ শেখ হাসিনার ত্যাগ ও তিতীক্ষার ফলে বাংলাদেশ কেবল একটি উন্নয়নশীল দেশই নয়, একটি মর্যাদাশীল দেশও বটে। শেখ হাসিনা একজন আত্মপ্রত্যয়ী, মানবতাবাদী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব হিসাবে আজ নিজেকে সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সহনশীলতা, দৃঢ়তা ও ধৈর্য যেন তার চরিত্রগত ধর্ম। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে সারাবিশ্বে নন্দিত। তিনি গণমানুষের নেতা থেকে আজ বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার খুলে পড়ে দেখুন— এমন কোনো প্রতিশ্রুতি নেই যেটি তিনি পূরণ করেননি। বরং যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি এই সরকার করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে এই ঢাকা শহরে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে জনতার ঢল নেমেছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। সেদিন স্লোগান ছিল— ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব।’ নদী পার হয়ে, পাহাড় ডিঙিয়ে একাকার হয়েছিল গোটা ঢাকার শহর। তিনি সেদিন বলেছিলেন— সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। আমি এই বাংলার মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাব। আজও তিনি তার ওয়াদা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে মায়া বলেন, জিয়াউর রহমান একজন খুনি। এই বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সন্ত্রাসী সংগঠন আবারও নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা শেখ হাসিনার সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবে না। আজকের এই সভা থেকে বলতে চাই— যদি আবারও আগুনসন্ত্রাস করেন, পেছন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেন, দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন— তাহলে আপনাদের ঘর থেকেই বের হতে দেওয়া হবে না।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মো. হুমায়ুন কবীর যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রসংশা করে বলেন, এই করোনার মহামারিতে যখন অনেকে ঘরে বসেছিলেন, করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন/সৎকার করার লোক ছিল না, তখন যুবলীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে তাদের দাফন/কাফন করেছেন। ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন। তারা সত্যিকারের মানবতার পরিচয় দিয়েছেন।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের নেত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই আমরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছি, বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতারা।