‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, সম্পদের অপব্যবহার বন্ধে সতর্ক হোন’
১৭ মে ২০২২ ১৬:৫৮
ঢাকা: বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, পুরো বিশ্ব দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে যাচ্ছে; তাই সম্পদের অপব্যবহার বন্ধে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, টাকা খরচের ক্ষেত্রে বা সবক্ষেত্রেই আমাদের অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। অহেতুক আমরা যেন সম্পদ ব্যয় না করি। আমরা যদি খুব ভালোভাবে হিসাব করে চলতে পারি তাহলে দেশে কোনো সমস্যা হবে না।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা সেই প্রভাব বাংলাদেশও এড়িয়ে যেতে পারছে না বলে জানান টানা মেয়াদে সরকারপ্রধানের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বব্যাপী কিন্তু এই অবস্থা বিরাজমান। তারপরও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি। কিন্তু এর প্রভাব তো পড়বেই। যেগুলো আমাদের আমদানি করতে হয় সেগুলোর দাম তো বেড়ে গেছে। আমাদের জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে। আর যেখানে যেখানে উৎপাদন হতো করোনা ও যুদ্ধের কারণে সেখানে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ফলে আমাদের দেশে একটু মূল্যস্ফীতি বা জিনিসের দাম বাড়বে।’
দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই যদি একটু সাশ্রয়ী হন, মিতব্যায়ী হন বা একটু সতর্ক হয়, তাহলে খুব সমস্যা হওয়ার কথা না। আর দ্রব্যমূল্য যে বেড়েছে, এটা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে। এখন অনেকে সমালোচনা করবেন। তারপরও বলব, আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই তাও কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। এখানে যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে দেশের যে কি অবস্থা হতো। রাস্তায় রাস্তায় মারামারি শুরু হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের সময়ে সেটা হয়নি। আমরা সেই জায়গা থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটা আমার এখনই প্রয়োজন সেটা করব। আর যেগুলোর এখন প্রয়োজন নেই সেগুলো একটু ধীরগতিতে করতে হবে। দেখতে হবে আমাদের অর্থনীতির উপর চাপটা যেন না আসে। যেখানে সারা বিশ্বব্যাপী মন্দা, পুরো বিশ্ব একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। টাকা খরচের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই আমাদের অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। সম্পদ যেন আমরা অহেতুক ব্যয় না করি। সেগুলো আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।’
১৫ আগস্ট নিমিষেই এক রাতে পিতা-মাতা-ভাইসহ আত্মীয়স্বজনকে হারিয়ে ছয় বছর বিদেশের মাটিতে আশ্রিত থেকে আজকের দিনে স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ৪২ বছর আগের সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির জন্য আমার বাবা সারাটা জীবন কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন। আমরা তো পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যে বয়সে ছেলেমেয়ে বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়, সেই সুযোগ তো আমাদের হয়নি। কারণ, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তো জানি আব্বা জেলে। কখনও এক বছর, আবার কখনও দেড় বছর জেলে। জেলখানায় দেখা হতো। এইভাবে আমাদের জীবন কেটেছে ‘
বঙ্গবন্ধুকন্য বলেন, ‘বাবা জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছিলেন এ দেশের মানুষের জন্য। সেকারণে আমার সিদ্ধান্ত ছিল, যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি দেশটা স্বাধীন করেছেন- দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সেটা আমাদের করতেই হবে। আর সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন বাংলার মাটিতে ফিরে আসি, তখন আমার সামনে লক্ষ্য একটাই ছিল, এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো।’
দেশে ফিরে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখার স্মৃতিচারণ করেন তিনি। এছাড়া তৎকালীন স্বৈরশাসকের বার বার বাধার কথাও স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘আমি আসার পর সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। ঘুরতে যেয়ে অনেক বাধারও সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু আমি পেয়েছি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যেদিন এয়ারপোর্টে নামি, আমার কোনো আপনজনের চেহারা আমি পাইনি। কিন্তু পেয়েছিলাম লাখো মানুষের ভালোবাসা। আর সেটাই আমার একমাত্র শক্তি। আর সেই শক্তি নিয়েই আমি চলেছি।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় আসা আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল। আমি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারি সেজন্য দেশের ভিতরে-বাইরে ভীষণ প্রতিবন্ধকতা ছিল। প্রতিবারেই বাধাগ্রস্থ হতে হয়েছে। আমি থেমে থাকিনি, দমে যাইনি। আমার একটা আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পাব।’
এ সময় দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী তার ৪২বছরের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার ঘটনা পরম্পরা স্মরণ করেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম