‘আন্তর্জাতিক আকাশপথের রিফুয়েলিং হাব হবে কক্সবাজার’
১৮ মে ২০২২ ১৩:৫৫
ঢাকা: যেখানে-সেখানে যত্রতত্র, অপরিকল্পিতভাবে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করতে কক্সবাজারবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পর্যটনের উন্নয়নে জেলায় অনেকগুলো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীতে কক্সবাজার বিমানবন্দরই আন্তর্জাতিক আকাশপথের রিফুয়েলিং হাব হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বুধবার (১৮ মে) বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নবনির্মিত ১০ তলা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাঠ কক্সবাজার প্রান্তে যুক্ত ছিলেন তিনি।
১০ তলা ভবন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজ কার্যালয়ে যাত্রা শুরু হলো। কক্সবাজারের পর্যটন, সমুদ্র সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘিরে সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই পরিকল্পনার ভেতরে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।
কক্সবাজারবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে-সেখানে যত্রতত্র, অপরিকল্পিতভাবে কোনো স্থাপনা করবেন না। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি।’
ছোটবেলায় পিতার সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবা তো বেশিরভাগ সময় কারাগারে থাকতেন। যে বছর বাইরে থাকতেন আমাদের কক্সবাজার বেড়াতে নিয়ে যেতেন। কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য খুব আকর্ষণ করতো আমাদের। আজকাল উখিয়াতে কোনো জঙ্গল দেখা যায় না। এক সময় উখিয়ায় ঘন জঙ্গল ছিল। জঙ্গলের পথ দিয়ে আমরা সেই ডাকবাংলোতে গিয়ে থেকেছি। কক্সবাজারের ছোট ছোট কটেজ ছিল, সেখানে থাকতে হতো।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য। সারাবিশ্বে এমন চমৎকার সমুদ্র সৈকত আর নেই। ৮০ মাইল লম্বা এই দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। যেটা বালুকাময়। অনেক সমুদ্র সৈকত থাকে নুড়ি পাথর দেওয়া। কিন্তু কক্সবাজার বালুকাময় এক চমৎকার সমুদ্র সৈকত। তার পাশাপাশি একদিকে পানি আরেক দিকে ঝাঁউবন।’
কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন একান্তভাবে অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক এয়াররুট সেটাও কক্সবাজারের উপর দিয়েই যাচ্ছে। যার জন্য এই অঞ্চলের উন্নয়নে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। এটি প্রাচ্য-পাশ্চত্যের মধ্যে সেতুবন্ধনের জায়গা। সেজন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলতেন, বাংলাদেশটাকে তিনি প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’
জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য। ১৯৭৪ সালে তিনি আইন করেন, ১৯৭৫ সালে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর যারা যারা একের পর এক ক্ষমতা দখল করেছিল তারা সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার আছে, এই বিষয়টা নিয়ে কখনোই কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সেই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সমুদ্র সম্পদ অর্থনীতিতে যাতে অবদান রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। তাই সুনীল অর্থনীতি আমরা গ্রহণ করেছি এবং এর ভিত্তিতে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করতে চাই। কক্সবাজার চমৎকার একটা জায়গা। এটাকে পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী মহেশখালী দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপসহ বিভিন্ন দ্বীপের উন্নয়নে গ্রহণ করা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজোরের উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এর উন্নয়নটা অপরিকল্পিতভাবে না হয়। কারণ, আমাদের সমুদ্রসীমা বিশাল। আমরা দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে চাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আজ যারা পশ্চিমা দেশ থেকে প্রাচ্যের দেশে যান তারা কিন্তু এই কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে রিফুয়েলিং করবে। কারণ রিফুয়েলিং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ অগ্রাধিকার পায়। এক সময় হংকং ছিল। এরপরে সিঙ্গাপুর, এখন দুবাই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কক্সবাজারই হবে আন্তর্জাতিক আকাশপথে রিফুয়েলিং’র একটা জায়গা।’
দেশের সকল আঞ্চলিক বিমানবন্দর থেকে যাতে সরাসরি বিমান কক্সবাজারে চলাচল শুরু হয় তার ব্যবস্থাও ভবিষ্যতে করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছি। সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ করা হয়েছে। একটি হাসপাতালও করা হবে। পাশাপাশি আমাদের স্টেডিয়ামগুলোকে আরও উন্নতমানের করা হবে, যাতে আন্তর্জাতিক মানের খেলা হয়। সব থেকে ভালো উন্নতমানের কনভেনশন সেন্টারও কক্সবাজারে করা হবে, অন্য কোথাও না, রাজধানীতেও না।’
কক্সবাজারের খুরুশকুলে আধুনিক শুটকি হাট করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘খুরুশকুলে একটি আধুনিক শুটকি হাট করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ কক্সবাজার উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার আগে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের দেশ। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করেই আমাদের উন্নয়ন করতে হবে।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে আষাঢ় মাস। আষাঢ় মাসে আমরা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পুরোটাই যেন ঝাউবন দিয়ে ঘিরে দিতে পারি। তাহলে যেকোনো ঝড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। প্রতিবছরই যদি সবাই মিলে কিছু ঝাউবন তৈরি করেন, তাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষদের রক্ষা করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘গোটা কক্সবাজার ঘিরেই আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সেজন্য উন্নয়ন কৃর্তপক্ষ করে দিয়েছি। যাতে যথাযথভাবে এটার ব্যবহার করা হয়। আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়েছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি হোক। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন কউক’র চেয়ারম্যান লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস/পিটিএম
কক্সবাজার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা