ঢাকা: বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, তার দল ভোট কেড়ে নেবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ চালানোর ইচ্ছা থাকলে মাঠে আসুন, ভোটে নামুন। কেউ ভোট কেড়ে নেবে না। অন্তত আমরা বলতে পারি, আমরা ভোট কেড়ে নিতে জানি না। আমরা জনগণের ভোট পাই। আমরা ভোট পাব। কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। সেজন্যই জনগণ আমাদের ভোট দেবে।
বুধবার (১৮ মে) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পরে ত্রাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দুঃস্থ নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ এবং বিভিন্ন এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতি বানিয়ে রেখেছিল। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে ৯০ শতাংশ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। এই করোনার মাঝেও আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা ধরে রেখেছি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির সভাপতি বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শ নিয়ে চলবেন। কারণ আওয়ামী লীগ একটি দল, যা দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারে। জাতির পিতা এই আওয়ামী লীগ গড়েছিলেন বলেই তার থেকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জাতির পিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে এরকম অনেক অপপ্রচার করেছিল। কিন্তু কিছু করতে পারেনি। তারপরই তো তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল। ছোট্ট রাসেলকেও ছাড়েনি, যেন ওই রক্তের আর কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারে।
তবে সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। হয়তো এ জন্যই বেঁচে গিয়েছিলাম। বাবার স্বপ্নপূরণ করব বলেই বোধহয় আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। নইলে এত গোলাবারুদ, এত বোমা-গ্রেনেড, এত চক্রান্তের মধ্যেও বেঁচে থাকলাম কীভাবে? আজ বেঁচে আছি বলেই দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তার কারণ, যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, সেই আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
তার সরকার আরও ১০০ বছর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি, দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। আর যখন থাকব না, তখনকার জন্যও পরিকল্পনা আমরা করে দিয়েছি। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হবে। এরপরও আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা করা আছে। সেই পরিকল্পনা, সেই নীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। দল হিসাবেও আমাদের দেশের জন্য যতটুকু কাজ, দলের প্রতিটি নেতাকর্মী মানুষের পাশে দাঁড়াবে। মানুষের জন্য কাজ করবে।
নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বিএনপি নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন, আমাদের লক্ষ্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বা দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দলকে মুক্ত রাখা, দেশকে মুক্ত রেখে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর যে দল বেশি কথা বলে যাচ্ছে, সেই বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? এদের তো নেতৃত্ব নেই। সব সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি দিয়ে নির্বাচনে জেতা যায় না। আর নির্বাচনে পরাজয় হবে জেনেই তারা নির্বাচনকে নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, নির্বাচনকে কলুষিত করতে চায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ অর্থনৈতিক উন্নতি পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশ পাচ্ছে। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণেই আজ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। কাজেই এ মর্যাদা ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়তে হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে অনেকদিন পর মন খুলে কথা বলার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। বলেন, অনেক দিন পর মন খুলে কথা বললাম। আসলে এই করোনাভাইরাস বন্দি করে রেখে দিয়েছে আমাকে। ২০০৭ সালে ছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বন্দি। আর এখন আমি নিজের হাতে নিজে বন্দি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে সুস্থ থাকার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি আসন্ন আষাঢ় মাসে বৃক্ষরোপণ করার আহ্বান জানান সবার প্রতি। সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে যার যেখানে যতটুকু কাজ আছে, সেটি করতে হবে। আর কোনো মানুষ যেন গৃহহীন-ভূমিহীন না থাকে, প্রতিটি অঞ্চলে এর খোঁজ নিতে হবে এবং প্রতিটি মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর করে দিতে হবে। দারিদ্র্যমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলব, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ হবে— এটিই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুঃস্থ নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয় এবং এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমগুলোর মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।