Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালেদা-ইউনুসকে পদ্মায় চুবিয়ে সেতুতে তুলতে বললেন শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ মে ২০২২ ২১:৩২

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তার কিছু দোসরদের পদ্মাসেতুতে নিয়ে সেখান থেকে পদ্মা নদীতে ‘টুশ করে ফেলে দেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পদ্মাসেতুতে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্রে’ জড়িত থাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকেও পদ্মা নদীতে ‘চুবনি দিয়ে একটু বাদে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার (১৮ মে) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পরে ত্রাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দুঃস্থ নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ এবং বিভিন্ন এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিল— জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে। যে স্প্যানগুলো বসানো হয়েছে, সেগুলো তার কাছে ছিল জোড়াতালি দেওয়া। তাই বলেছিল— জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। তার কিছু দোসররাও সুর মিলিয়েছিল। তাদের কী করা উচিত? পদ্মাসেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুশ করে ফেলে দেওয়া উচিত।

ড. মুহম্মদ ইউনুসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আরেকজন আছেন, এমডি পদের জন্য পদ্মাসেতুর বিদেশি টাকা বন্ধ করেছে। তাকেও পদ্মা নদীতে দুইটা চুবনি দেওয়া উচিত। মরে যেন না যায়, সেজন্য পদ্মা নদীতে দুইটি চুবনি দিয়ে একটু বাদে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘ভোটের মাঠে আসুন, আওয়ামী লীগ ভোট কেড়ে নেবে না’

ড. ইউনুস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ড. ইউনুস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারবে না ১০ বছর। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে, ৬০ বছর পর্যন্ত (দায়িত্বে) থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। এই বয়সটা কমাবে কীভাবে? মামলায় হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনুস এবং যেটা আমরা শুনেছি, মাহফুজ আনামও ছিল। তারা আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টে চলে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। হিলারি একেবারে বিশ্বব্যাংকের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার শেষ কর্মদিবসে পদ্মাসেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়।

তাতে অবশ্য ‘শাপেবর হয়েছে’ বলেই মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, (বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায়) একদিকে শাপেবর হয়েছে। কেন? কারণ, বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করতে পারে, সেটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি।

পদ্মা রেল সেতু নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তার জবাব দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের এখানে একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন— ‘পদ্মাসেতুতে যে রেললাইন হচ্ছে, সেটি ভায়াবল হবে না। ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে, এই ঋণ শোধ হবে কী করে? কারণ ওই দক্ষিণবঙ্গের মানুষ তো রেলে চড়বে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন?’ সেতুর কাজ হয়ে গেছে। এখন সেতু নিয়ে কথা বলে আর পারছে না। তাই এখন এখন রেলের কাজ চলছে, রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলছে। আমার মনে হয় আমাদের সবার উনাকে চিনে রাখা উচিত। কারণ রেলগাড়ি যখন চালু হবে, উনাকে একদিন রেলগাড়িতে চড়ানো উচিত।

বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে দুর্নীতি ও বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদনের বেহাল দশার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নানামুখী সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর বিপরীতে তিনি তার সরকারের টানা মেয়াদের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরেন। আরও বলেন, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। আমরা এখন তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি। অসুস্থ বলে এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। অথচ আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বারবার। তাকে আমি এই করুণাভিক্ষা দিয়েছি, যেন বাসায় থাকতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও তাকে আমরা এটুকু সুযোগ দিয়েছি।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তুললেও তাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু বিএনপির আমলে নির্বাচনের ইতিহাস এতই কলুষিত যে তাদের এ নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকারই নেই। ঢাকা-১০ আসনে মোসাদ্দেক হোসেন ফালু, মাগুরা-মিরপুরের নির্বাচন ছিল। যাদের নির্বাচন কলুষিত করার এত রেকর্ড, তারা কোন মুখে কথা বলে? অথচ তাদের মুখে এখন নির্বাচনের প্রশ্ন। নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি করেছি, সবগুলো আমাদেরই সিদ্ধান্ত বা আমাদেরই চিন্তা। মানুষ যেন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার পায়, সেটা নিয়েই আমরা কাজ করেছি। আওয়ামী লীগই ভোটের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে শক্তি। আর সেই শক্তি আছে বলেই, জনগণের শক্তিতে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পেরেছি।

সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিলেও এগুলো নিয়ে অনেকেই সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল। এর ভেতরে আমাদের আবার কিছু নতুন আঁতেল জুটেছে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেই দিলো— আমরা যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি, এটি নাকি অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিকর।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস তো চিরদিন থাকে না। একেকটি কূপ খনন হলে তা থেকে গ্যাস উত্তোলনের সময় নির্দিষ্ট থাকে। তেলভিত্তিক ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ আমরা করি, যা অনেক খরচের ব্যাপার। যদি কোনোদিন এমন হয় যে আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টই তো বিদ্যুৎ দেবে। আর এটাই সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎকেন্দ্র। হ্যাঁ, বিনিয়োগটা বড় করে দেখা যায়। কিন্তু বিদ্যুৎ যখন উৎপাদন হবে আর এই বিদ্যুৎ যখন মানুষ ব্যবহার করবে, আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, বড় বড় অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা এ ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা বলেন কীভাবে— সেটাই আমার প্রশ্ন। মেগা প্রকল্পগুলো করে নাকি খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা সব টেলিভিশনে গিয়ে কথা বলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করি, সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড চলে গেছে। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। সেটা নিয়েও তো প্রশ্ন। এত টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট করে কী হবে— এই প্রশ্নও কিন্তু তুলেছে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে কেন?

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা নিয়ে অনেকেই ব্যাঙ্গ করেছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজ ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করেই আমাদের বিরুদ্ধে তারা সমালোচনা করে। এটা বোধহয় ভুলে যায়— তারা যে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে, এটা কিন্তু আমরা দিচ্ছি। খালেদা জিয়া, জিয়া বা এরশাদের আমলে তাদের কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল? কতটুকু অধিকার ভোগ করত তারা? বেসরকারি টেলিভিশন এত দিয়ে দিয়েছি যে দিনরাত টকশো করে। আমি মাঝে মাঝে বলি, এতো টক টক কথা না বলে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন! আর কত টক কথা বলবেন? তারা টকশো করে যাচ্ছে। কেউ তাদের গলা চিপেও ধরেনি, মুখ চিপেও ধরেনি। তবে হ্যাঁ, সব কথা বলা শেষে আবার তারা বলে— কথা বলতে দেওয়া হয় না!

তিনি বলেন, আমাদের বিএনপির এক নেতা তো সারাদিন মাইক মুখে নিয়ে বলেই যাচ্ছে। সারাক্ষণ কথা বলেই যাচ্ছে। একবার কথা বলতে বলতে অসুখও হলো। চিকিৎসা করে এসে আবার কথা বলছে। তার কথা তো কেউ বন্ধ করছে না। তাদের আন্দোলনে যদি জনগণ সাড়া না দেয়, সে দোষটা কার?

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দিয়েছি আমি। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। সেই ভ্যাকসিন তো এরা নিয়েছে, সেটা কিন্তু বাদ দেয়নি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। আমাদের যারা টার্গেটেড ছিল, শতভাগ দিতে পেরেছি। বুস্টার ডোজও আমরা শুরু করেছি। তারা তো নিশ্চয়ই দুইটা ডোজ নিয়েছেন, বুস্টার ডোজও নিয়েছেন। তা আমার হাতে কেনা বিনা পয়সার এই ভ্যাকসিন নিতে পারল আর আমাদের উন্নয়নটা তাদের চোখে পড়ে না? এখন কি ভ্যাকসিন চোখেও দিতে হবে নাকি?

পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুঃস্থ নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয় এবং এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমগুলোর মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর