উজানের ঢলে সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত, নগরীও জলাবদ্ধ
১৮ মে ২০২২ ২০:৫৭
সিলেট: উজানের পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত তিন দিন ধরে সিলেট নগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকার অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
এখনো ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, কানাইঘাটে সুরমা, সিলেটে সুরমা, অমলসীদে কুশিয়ারা, শেওলায় কুশিয়ারা এবং জৈন্তায় সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বুধবার (১৮ মে) সন্ধ্যার সবশেষ তথ্য বলছে, উজানের ঢল অব্যাহত রয়েছে। এতে করে নতুন নতুন প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিলেট নগরের কুছাই ও আলমপুর এলাকায় সুরমা নদীর ডাউক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকায় মানুষ রাত জেগে বাঁধ পাহাড় দিচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও শহর রক্ষা এ দুইটি বাঁধ টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, নগরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা কালিঘাট গত তিন দিন ধরে পানির নিচে রয়েছে। এতে করে পাইকারি আড়তদারদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হক। তিনি জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে কালিঘাট। ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চল থেকে আসা শতাধিক ট্রাক পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
সুরমা নদীর তীরবর্তী নগরীর ঘাষিটুলা এলাকায় বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের ঘাষিটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এলাকার পানিবন্দি মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ জানিয়েছেন, এখনো সরকার থেকে বরাদ্দ আসেনি। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে যারা উঠেছেন, তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নগরের বৃহত্তর উপশহর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। এই এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট তীব্র হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মজম্মিল আলী জানিয়েছেন, তিন দিন ধরে পানি না থাকায় তারা খাবার পানি পাচ্ছেন না। বন্যার কারণে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া গ্যাস লাইনে পানি উঠে শখানেক পরিবারে গ্যাস সংযোগ নেই। এতে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানান তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান ত্রাণ সমন্বয়কারী রুহুল আলম জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৫শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা, উমাইরগাও, জালালাবাদ, কান্দিগাও ও বিশ্বনাথের লামাকাজি, খাজাঞ্চি এলাকাতেও বন্যার পানি বেড়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। জেলায় ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অর্ধলাখ মানুষ মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলার কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, সদর, বিশ্বনাথ, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। কানাইঘাট সদরেও পানি কোমর সমান। এতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
জৈন্তাপুরের চারিকাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, পাহাড়ি জনপদ জৈন্তাপুরের ৭০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে। বহু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বেড়েছে।
চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল হক। বুধবার সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে তারা ত্রাণ বিতরণ করেন।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমরা নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী বর্ষার আগেই নদীগুলো খনন করতে হবে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/টিআর