দুই ঘটনায় যৌন হয়রানির অভিযোগ ঢাবি ছাত্রের বিরুদ্ধে
১৯ মে ২০২২ ১১:৩৩
পরপর দুই দিন পৃথক দুই নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। দুই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই নারী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ছাত্রের নাম রাকিবুল হাসান। তিনি ২০১৮-১৯ সেশনে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন। সে বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
গত ১৫ মে রাকিবের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রথম অভিযোগটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের একজন নারী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত রোববার (১৫ মে) টিএসসিতে অবস্থানকালে একটি ছেলে অনেকক্ষণ ধরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বাজে মন্তব্য করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার আরও কাছে এসে অত্যন্ত অশালীন ও অভদ্র ইঙ্গিত দিতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি তার অশালীন আচরণের কারণ জানতে চাইলে উল্টো আমার ওপর চড়াও হয়ে নানা হুমকি দিয়ে চলে যায়।
ওই শিক্ষার্থী আরও উল্লেখ করেন, আমি তাকে ক্যাম্পাসের ছাত্রী পরিচয় দিয়ে আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে অবহিত করলেও সে তার অবস্থান থেকে নিবৃত্ত হয়নি।
অন্যদিকে, পরদিন (১৬ মে) রাকিবের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন নারী শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে ওই নারী শিক্ষার্থী রাকিবের হাতে যৌন হেনস্তার শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, গত সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমি, আমার বন্ধু এবং বন্ধুর মা ঘুরতে আসি। বন্ধুর মা চলে যাওয়ার পর আমরা শিখা চিরন্তনের পাশে বসে নিজেদের মধ্যে কথা করছিলাম। এসময় একটা মোটরসাইকেলে রাকিবসহ তিনজন ছেলে এসে আমরা ক্যাম্পাসের কি না জিজ্ঞেস করে। পরে না বললে তারা আমার সঙ্গে থাকা বন্ধুকে একপাশে নিয়ে গিয়ে মারধর করে, একপর্যায়ে আমাকে হয়রানি করে। আমি চেঁচামেচি শুরু করলে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়’
এদিকে দুটি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন রাকিবুল হাসান। ১৫ মে টিএসসির ঘটনা সম্বন্ধে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রাকিব বলেন, ‘এ ঘটনাটা ভুল বোঝাবুঝি। আমি আমার বান্ধবী মনে করে ওই আপুকে ডাক দিয়েছিলাম। এরচেয়ে বেশি কিছু নয়। পরে আমি ভুল বুঝতে পারি এবং আপুকে বিষয়টি জানাই। আমি উনাকে উত্যক্ত কিংবা খারাপ কোনো কথা বলিনি।’
অন্যদিকে শিখা চিরন্তনের ঘটনায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন রাকিব। তিনি বলেন, ‘যে সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে বলা হচ্ছে সেসময় আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। তাকে সময় দিচ্ছিলাম। এখানে আমার জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। আপুটি আমাকে কীভাবে চিহ্নিত করেছে সেটি আমি জানি না’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী গণমাধ্যমকে বলেন, টিএসসির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আর উদ্যানের ঘটনার অভিযোগপত্রটি আমি এখনো পাইনি। তবে বিষয়টি জেনেছি। মেয়েটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার অভিযোগ রাখার কোনো সুযোগ নেই। মেয়েটিকে আমি পরামর্শ দিচ্ছি, সে যেন তার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায় এবং প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়। আমাদের তরফ থেকেও সহযোগিতা করা হবে।
অভিযুক্ত রাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের একজন সক্রিয় কর্মী। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আবু ইউনুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযুক্ত রাকিব সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগের কোনো পদবীতে নেই। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই যেন যথাযথ তদন্ত করে দোষীকে শাস্তির আওতায় আনা হয়’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসন্ন হল কমিটিতে স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
সারাবাংলা/আরআইআর/এসএসএ