বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীর সড়কে ‘শনির দশা’
১৯ মে ২০২২ ১৫:২৯
ঢাকা: সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের (১৯ মে) প্রথম প্রহরের দিকে রাজধানীর বিজয় সরণিতে বাস-কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মধ্যরাত ২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটলেও সড়কে উলটে যাওয়া কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার করা হয় সকালে। এর ফলে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এদিন সকাল থেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে পড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে একাধিক এলাকার সড়কে রোগী পরিবহন করা অ্যাম্বুলেন্সও আটকে থাকতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সরজমিনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে— উত্তরা, বিমানবন্দর সড়ক, খিলক্ষেত, বনানী, মহাখালী, সাত রাস্তা, মগবাজার, বাংলামোটর, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, মিরপুর, আগারগাঁও এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহন প্রায় স্থির হয়ে ছিল সকাল ১০টা পর্যন্ত। এরপর যানবাহন কিছুটা চলাচল শুরু করলেও গতি ছিল অত্যন্ত ধীর।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন ট্রাফিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিজয় সরণি সড়কে বাস ও কাভার্ড ভ্যানের মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। এর প্রভাবেই মূলত এই ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়েছে।
পুলিশের ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের শেরে বাংলা জোনের কর্মকর্তা শোভন চন্দ্র হোড় সারাবাংলাকে বলেন, দুর্ঘটনায় রাস্তায় পড়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানকে সরাতে সময় লেগেছে। কারণ কাভার্ড ভ্যানটি মাল বোঝাই অবস্থায় উলটে ছিল। ভোরেই আমরা বাসটিকে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হই। সেটিও দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছিল। কিন্তু কাভার্ড ভ্যানটিকে এত সহজে সরানো সম্ভব হয়নি। ক্রেন দিয়ে কাভার্ড ভ্যানটি সরানোর পর সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাস্তায় যানচলাচল শুরু হয়।
রাত ২টার দিকে দুর্ঘটনা ঘটলেও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে ভোর পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করতে হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে শোভন চন্দ্র হোড় বলেন, মূলত আমাদের ট্রাফিক কর্মকর্তাদের এক শিফটের ডিউটি শেষ হয় রাত ২টার দিকে। নতুন শিফট দায়িত্ব শুরু করে ভোর ৬টার দিকে। দুর্ঘটনাটি দুই শিফটের মাঝখানে পড়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে দেরি হয়েছে।
তিনি আর বলেন, মাল বোঝাই থাকার কারণে কাভার্ড ভ্যানটি সরাতে বেশি সময় লেগেছে। তবে এ উদ্ধার কাজের বিষয়টি আসলে বেশ জটিল ছিল। বড় আকারে কাভার্ড ভ্যান সরাতে বড় ক্রেনের প্রয়োজন ছিল। নিরাপত্তার দিকেও গুরুত্ব দিতে হয়েছে। সে কারণে সময়ও বেশি লেগেছে। বিজয় সরণির এই জায়গাটি ঢাকার অনেকগুলো রুটের সঙ্গে যুক্ত। তাই এখানকার সড়ক বন্ধ থাকায় একদিকে বিমানবন্দর সড়ক ও উত্তরা এবং অন্যদিকে বিজয়নগর পর্যন্ত প্রভাব পড়েছে।
এদিন রাজধানীর পল্লবী থেকে কালশী ইসিবি চত্বর হয়ে মহাখালী আসার পথে ফ্লাইওভারে যানজটে বসে থাকা সাবরিনা চৌধুরী বলেন, মগবাজারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করি। ৯টায় অফিস শুরু আমার। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৭টায় রওনা দিয়েছি। এখান পর্যন্ত এসেছি মাত্র ১০ মিনিটে। কিন্তু এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা এখানেই বসে আছি। একটু পর পর গুগল ম্যাপ দেখছি। পুরো রাস্তা লাল হয়ে আছে।
সকাল ৮টায় উত্তরা থেকে কাকরাইলের পথে রওনা দেন তৌফিক হাসান। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা জানালেন, খিলক্ষেত পর্যন্ত পৌঁছাতেই তার তিন ঘণ্টা সময় লেগে গেছে!
দুপুর ২টার দিকে কথা হয় পুলিশের ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের শেরে বাংলা জোনের সহকারী কমিশনার শোভন চন্দ্র হোড়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাভার্ড ভ্যান উদ্ধারের পরে বিজয় সরণি এলাকায় গাড়ি চলাচল শুরু হয় প্রায় স্বাভাবিকভাবেই। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস হিসেবে এমনিতেই বৃহস্পতিবার গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তার ওপরে আজ কয়েক ঘণ্টার যানজটে গাড়ি জমে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। আমরা খুব দ্রুতই তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, বিজয় সরণি সড়কে দু’টি গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে প্রায় তিন ঘণ্টা যানচলাচল ব্যাহত হয়। এদিন সকালে ভিআইপি মুভমেন্টও ছিল। বিকেলেও একটি ভিআইপি মুভমেন্ট আছে। সবকিছু মিলিয়ে আজকের যানজট পরিস্থিতি একটু বেশি নাজুক।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর