Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দল বহিষ্কার করার আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি: সাক্কু

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২২ ২২:৫৭

কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) বর্তমান মেয়র এবং আসন্ন নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে আজীবনের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিএনপি। তবে সাক্কু বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বলে দল বহিষ্কার করার আগেই তিনি দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, যেহেতু আমি আসন্ন কুসিক নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি, তাই দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। কেন্দ্র বহিষ্কার করার আগেই আমি আমাদের জেলা বিএনপি’র সভাপতি রাবেয়া আপার কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে আমার প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণার পরপরই আমি পদত্যাগপত্র জমা দেই। তবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের অনুরোধে কেন্দ্রকে জানিয়েই আমি নির্বাচন করছি। এরপরও কেন বহিষ্কারাদেশ, সে বিষয়টি আমি বুঝতে পারছি না।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সন্ধ্যার পর বিএনপি থেকে সাক্কুকে বহিষ্কারের বার্তা গণমাধ্যমে পাঠানো হলে সারাবাংলাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়াদে নির্বাচিত এই মেয়র।

আরও পড়ুন- সাক্কুকে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার

এদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সই করা বার্তায় বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মনিরুল হক সাক্কুকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এখন থেকে দলের নেতাকর্মীদের মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখার জন্যও অনুরোধ করা হয় বার্তায়।

মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। দলের বহিষ্কারাদেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে আমার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপরই আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরীর কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।

তিনি বলেন, কেন্দ্রের নেতাদের আমি আগেই জানিয়েছি— দল আমাকে অব্যাহতি দিক বা না দিক, আমি কুমিল্লা সিটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করব। কুমিল্লার নাগরিকদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও কর্মীদের জন্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে কারণে আমার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এখন এখানে আমাকে বহিষ্কার কেন করা হলো, তা বোধগম্য হয়নি।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণ তুলে ধরে সাক্কু বলেন, দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে আমি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। বৃহত্তর কুমিল্লার নাগরিকদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গ্রহণযোগ্যতা আছে। আর তাই নাগরিকরা চান যেন আমি নির্বাচন করি। নির্বাচিত মেয়র হিসেবে কিছু কাজও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। তাই এখানকার ভোটারদের অনুরোধে এবং অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্যই আমি নির্বাচন করছি। এটিই আমার শেষ নির্বাচন।

কুমিল্লা সিটির প্রথম নির্বাচনেই জয় পেয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সে নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নিলে দল থেকে অব্যাহতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। সেবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা প্রয়াত অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাডভোকেটকে ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হন।

পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবেই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন সাক্কু। সেবার ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে টানা দুই মেয়াদে কুসিক মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

আগামী ১৫ ‍জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটির তৃতীয় নির্বাচনেও মনিরুল হক সাক্কু জয় নিয়ে আশাবাদী। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলে এবারও তিনি প্রথম নির্বাচনের মতোই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই নির্বাচনে।

এদিকে, কুসিক মেয়র হিসেবে মনিরুল হক সাক্কুর টানা দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে গত সোমবার (১৬ মে)। ওই দিন তিনি মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়ান। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম।

এবারের কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ছয় জন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে তাদের সবাই বৈধ প্রার্থীর স্বীকৃতি পেয়েছেন। আগামী ২৬ মে পর্যন্ত তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। এরপর ২৭ মে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। সেদিন থেকে তারা নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। ভোট হবে ১৫ জুন।

এবারে কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। সিটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন কুসিক নির্বাচন কুসিক নির্বাচন ২০২২ বিএনপি থেকে বহিষ্কার মনিরুল হক সাক্কু


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর